জামিনে মুক্ত ‘’বিদেশি’’ সানাউল্লা, আদালত নোটিস দিল এনআরসি-কে

জাকির হোসেন সেখ, ৭জুন, নতুন গতি: জামিনের আবেদন নিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সানাউল্লা।
৩০ বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পরে বর্তমানে যিনি অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর। সেই মহম্মদ সানাউল্লাকেই কিনা ‘’ঘোষিত বিদেশি’’ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজ গুয়াহাটি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন তিনি। জামিন দেয়ার সাথে সাথে মামলার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছে উচ্চ আদালত।

    এনআরসি আইনে সানাউল্লাকে গ্রেফতারের পরই তদন্তে বিরাট ‘গলদ’ ও অসঙ্গতি ধরা পড়েছিল। তদন্তকারী অফিসার চন্দ্রমল দাসও স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তদন্তে ভুল হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতেই আজ শুক্রবার গুয়াহাটি হাইকোর্টে জামিনের আর্জি জানান সানাউল্লা। হাইকোর্ট সানাউল্লার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে। একই সঙ্গে তদন্তকারী অফিসার চন্দ্রমল দাস এবং এনআরসি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নোটিস পাঠিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও নোটিস পাঠিয়েছে উচ্চ আদালত। মহম্মদ সানাউল্লার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ।

    উল্লেখ্য যে, অসমের কামরূপ জেলার কলহিকশ গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সানাউল্লা ৩০ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পর ২০১৭ সালে অবসর নেন। তার পর যোগ দেন অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে। তারপরও ফরেনার্স ট্রাইবুনালের তদন্তে সম্প্রতি তাঁকে ‘’বিদেশি’’ চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়। তার পরই উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য।

    সানাউল্লার তদন্তে যে তিন গ্রামবাসীর সই রয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ যাদের নামে স‌ই রয়েছে সেই তিনজনই দাবি করেন যে, তাঁদের কাছে আদৌ কেউ এই বিষয়ে তদন্ত করতেই আসেননি। আবার যে সময় সানাউল্লার তদন্ত হয় (২০০৮ সালের মে মাস থেকে ২০০৯ সালের অগস্ট) তখন তিনি গ্রামে ছিলেন বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর সার্ভিস রেকর্ড বলছে, ওই সময়কালের মধ্যে জঙ্গি দমনের কাজে সানাউল্লা মণিপুরে কর্মরত ছিলেন।
    পরে তদন্তকারি অফিসার চন্দ্রমল দাসও স্বীকার করে নেন, “তদন্তে কোথাও গন্ডগোল হয়েছে। তিনি সানাউল্লা বলে এক জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন, তবে তিনি অন্য কোনও সানাউল্লা হতে পারেন।” অর্থাৎ প্রশাসনিক কোনও স্তরে নাম বিভ্রাটের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি দায় এড়াতে চেয়েছেন।
    সব মিলিয়ে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াই কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতে সওয়াল করেছেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ।
    তারপরই গুয়াহাটি হাইকোর্ট মহম্মদ সানাউল্লার অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন।