শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে জয়, কৃত্রিম পা লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন নুর মহম্মদ

আজিজুর রহমান, গলসি : শারিরীক প্রতিবন্ধকতা যে কোন বাধা নয় তা প্রমান করে দেখিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক নুর মহম্মদ খাঁ ওরফে কালো। তিনি বায়না ১ ব্লকের ক্ষেমতা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাম্বুলেন্স চালক। করোনার সময় তিনি এলাকার চার তিনটি ব্লকের শতশত মানুষকে কোয়ারিনটাইন সেন্টার সহ বিভিন্ন হাসপাতালে পৌছে দিয়েছেন। এমনকি পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে গেছেন মানু‌ষের ডাকে। এই ভাবেই তিনি করোনা যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য বিশ্বনাথ রায় জানিয়েছেন, নিজের প্রানের ঝুঁকি নিয়ে আরামবাগ হাসপাতাল সহ বেশ কিছু হাসপাতালে পরে থাকা মৃতদেহ তুলে এনে পরিবারের লোকের কাছে পৌছে দিয়ে ছিলেন নুর মহম্মদ। তাছাড়া সেহারা বাজার ও উচালন গ্রাম থেকে করোনায় মৃত দুই ব্যক্তিকে পরিবারের লোকের সম্মতিতে তিনি কাটোয়ার শ্মশান ঘাটে গিয়ে দাহ করেছিলেন। নুর মহম্মদ জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে মাঝামাঝি সময় হঠাৎ তার পায়ের তালুতে আচমকা একটি ঘা দেখা দেয়। যা ধীরে ধীরে মারাত্বক আকার নেয়। অবশেষে ২০২২ সালে মার্চ মাসে হাঁটুর নিচে থেকে তার পা কেটে বাদ দিতে হয়। তবে তাতেও তিনি এতটুকু দমেননি। কৃত্তিম পা লাগিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। পা বাদ দেওয়ার ছয়মাস পর থেকে তিনি আবার অ্যাম্বুলেন্স চালানো শুরু করেন। এভাবেই তিনিই নিজের কর্মজীবনে ফিরে এসে প্রামণ করেন শারিরীক প্রতিবন্ধকতা কোন বাধা নয়। এখন নিত্যদিন তিনি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে বর্ধমান, দূর্গাপুর, কোলকাতায় সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌছে দিচ্ছেন। রবিবার গলসিতে বেঙ্গল পাক্ষিক পত্রিকা সমিতি ২৫ তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুষ্ঠানে তার প্রতিভাকে সম্মান জানাতে তাকে স্মারক সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। তাছাড়াও তাকে উৎসাহিত করেন অনুষ্ঠানের আয়োজক বুলবুল কোঁনার সহ অনেকেই। বুলবুল কোঁনার জানিয়েছেন, এদিন অনেক গুনি মানুষকে তারা সম্মানিত করেছেন। নুর মহম্মদের কথা বলতে গেয়ে তিনি বলেন, ওর বাড়িতে তিনজনের পেট চালাতে নুর মহম্মদকে তার পুরনো পেশায় ফিরে আসতে হয়। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সুগার থাকা অবস্থায় তার ডান পা এ অস্ত্রোপচার হওয়ায় কিছুদিনেই তা জটিল আকার নেয়। ফলে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করে সর্বশান্ত হয়ে যান। এরপর তিনি দক্ষিণ ভারতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। সেখানেও ডান পা এর কিছু অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। তবুও পচন বন্ধ না হওয়ায় আবারও ২০২২ সালের মার্চ মাসে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার তার ডান পা হাঁটুর নিচে থেকে বাদ দিতে হয়। এরপরই কৃত্রিম পা লাগিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। এদিন নিজের কাজের সম্মান পেয়ে খুশি হয়েছেন নুর মহম্মদ খাঁ।