|
---|
আজিজুর রহমান, পূর্ব বর্ধমান : গলসি রুপশ্রী প্রকল্পের পর আবারও বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ গলসি ১ ব্লক বিডিও অফিসে। সরকারি প্রকল্পের কাজ না করেই তের লক্ষ একাত্তর হাজার নয়শো পাঁচ (১৩,৭১,৯০৫/-) টাকা নয়ছয় এর অভিযোগ খোদ বিডিওর বিরুদ্ধে। আর এতেই ব্লক জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরেছে। যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গলসি ১ ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস। তার দাবী ছুটি থাকার কারনে কাজ বন্ধ ছিল। আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্ত কাজ হয়ে যাবে। কাজ না করে কিভাবে একজন ঠিকাদার টাকা পেয়ে গেলেন? এবিষয়ে তিনি জানান, সবটাই নিয়ম মেনে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সিপিআইএম এর জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন চাকরির ক্ষেত্রে ব্যাপক টাকার লেনদেন হয়েছে। যারজন্য ইতিমধ্যেই সর্বত্রই সিবিআই ঢুকছে। গোটা পশ্চিম বাংলার উপর থেকে নিচে অবদি দুর্নীতিতে ভরে গেছে। গলসি ১ নং বিডিও অফিস তারই একটি রুপ। তিনি বলেন, জেলা শাসককের বিষয়টি তদন্তে করে দোষীদের উপযুক্ত শান্তির ব্যাবস্থা করুক। সুত্রের খবর, গলসি ১ নং ব্লকের নয়টি অঞ্চলে ১৪৪ টি প্রাইমারি উচ্চ স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নাঘরের স্টোররুম গুলি সারাইয়ের জন্য রান্নাঘর প্রতি বরাদ্দ হয়েছিল দশ হাজার করে টাকা। পূর্ব বর্ধমান জেলার মিডডে মিল দপ্তরের ২০২১ -২০২২ অর্থ বর্ষের MDM স্কিমে জেলার ২১৯০ টি পাইমারী ও উচ্চ প্রাইমারী স্কুলের রান্নাঘর মেরামতের জন্য বরাদ্দ করেছিল ২ কোটি ১৯ লক্ষ টাকার ফান্ড। যার মধ্যে গলসি ১ নং ব্লক ১৪৪ টি স্কুলের জন্য বরাদ্দ ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। স্থানীয় এক ঠিকেদারের অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে স্কুলের রান্নাঘর ও স্টোররুম মেরামতের জন্য বরাদ্দ ওই টাকা অন লাইন টেন্ডার না করে বরাত দেওয়া হয় গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতির ঘনিষ্ঠ এক ঠিকেদারকে। তিনি বলেন, ইং ২১/০২/২২ তারিখ অনলাইন টেন্ডার না ডেকে কোটেশন টেন্ডার ডাকেন গলসি বিডিও দেবলীনা দাস। এবং ০৪/০৩/২২ তারিখ কাজগুলি করার জন্য একটি ঠিকেদারকে ইচ্ছামত বরাত দেওয়া হয়। তথচ তিনি কাজ করে পেমেন্ট পাচ্ছেন না। প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ঠিকেদার অভিজিৎ কোনারকে গত ইং ২০২২ সালের ২৯ শে এপ্রিল ০০০১৪০ নং চেকে ৪,৪৭,৩৪৮/- টাকা এবং ইং ৬ ই মে ০০০১৪৪ নং চেকে ৯,২৪,৫৫৭/- টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার বিভিন্ন নথি ইতিমধ্যেই জনসম্মুখে এসেছে। গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চ্যাটার্জ্জী বলেন, আমার পঞ্চায়েত সমিতিতে এমন কোন ঢেন্ডার হয়নি। ঠিকেদার ঘনিষ্ঠর বিষয়ে তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠত সবাই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্ম ঘটনায় সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সেখ ফিরোজ হোসেন জানান, পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা ও বিডিও মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রান্নাঘর মেরামতের টাকা তছরুপ করেছেন। যা আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না। বিষয়টি নিয়ে আমরা নয়টি অঞ্চলের মানুষের সই সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তদন্তের আবেদন জানাচ্ছি। তার দাবী এর আগেও রুপশ্রী প্রকল্প দুর্নীতি হয়েছিল। তবে সেইভাবে কোন তদন্ত হয়নি। এবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুসিয়ারি দিয়েছেন। গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পুর্ত ও পরিবহনের কর্মাধক্ষ্য ফজিলা বেগম বলেন, ইতিমধ্যেই তিনি একটি লিস্ট হাতে পেয়েছেন। তিনি খবর নিয়ে দেখেছেন তার লোয়া রামগোপালপুর অঞ্চল ছাড়াও বেশকিছু অঞ্চলে কোন স্কুলের রান্নাঘরের স্টোর রুমের মেরামতের কাজ করা হয়নি। তারা বিষয়টি সারে জমিনে তদন্ত করে দেখে উদ্ধোতন কর্তৃপক্ষেকে জানাবেন। গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেখ রোকেয়া বলেন, তার কাছে স্কুলের শিক্ষকরা জানতে আসায় বিষয়টি তার নজরে আসে। ঘটনাটি তিনি গলসি ১ নং ব্লক বিডিও দেবলীনা দাসের কাছে জানতে গেলে বিডিও তার কথা এড়িয়ে যান। এদিকে তিনিও খবর নিয়ে জানতে পারেন, ব্লকের কোন স্কুলে রান্নাঘরের স্টোর রুমের মেরামতির কাজ করা হয়নি। স্থানীয় পুরসা হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য নাজমুল জামাদার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকায় দুর্নীতির বিষয়টি মারাত্বক অপরাধ। তাদের স্কুল ছাড়াও আশেপাশে কোন স্কুলে রান্নাঘর মেরামতের কাজ হয়নি। তথচ এত টাকার ঘোটালা। বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করুক।