সিঙ্গুরের গোপালনগর গ্ৰামের আন্দোলনকারী  শ্রীকান্ত ঘোষ বলেন, ‘লজ্জা আমরা যে পার্থ চট্টোপাধ‍্যায়কে দেখেছি, এ তো তার উল্টো

নিজস্ব সংবাদদাতা : কৃষকদের ওঁর উপর কোনও সহানুভূতি নেই। ওঁর যদি সর্বোচ্চ শাস্তির বেশি কিছুও হয়, হোক।’ বক্তার নাম ভুবন বাগুই। ঠিকানা সিঙ্গুরের (Singur) গোপালনগর গ্রাম। আর যাঁর সম্পর্কে মন্তব্য, সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এখন ইডি (ED) হেফাজতে। কিন্তু সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রধান কারিগর তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সম্পর্কে এমন মনোভাব কেন তাঁর?ভুবন বললেন, ‘এই অর্থনৈতিক বদল আমরা চাইনি। বাংলার জনগণ যাঁরা ভোট দিয়ে দিদিকে এনেছিলেন তাঁরাও চাননি। তৃণমূল দলটা যে চোর ও বেইমানে ভরে গিয়েছে তা ২০১১ সালের পরই বোঝা গিয়েছিল।’ এল সিঙ্গুরের জমি ও কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গও। কৃষকের কথায়, ‘কোর্টের রায়ে জমি ফিরে পাওয়ার পরও যে সেটি অপরিষ্কার হয়ে পড়ে রয়েছে সে জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় দায়ী। এখনও জমির অর্ধেক চাষ হচ্ছে, অর্ধেক হচ্ছে না। নিশ্চয়ই ওঁদের কোনও লালসা রয়েছে। ওঁদের এজেন্ট রয়েছে সিঙ্গুরে। হয়তো তাঁদের মারফত ফের সিঙ্গুরের জমিটা কেনাবেচা করবেন। তাই ঠিক করে দেননি।’এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার গ্রেফতারি নিয়ে ঠিক এমনই মনোভাব একসময়ের আন্দোলনকারী কৃষকদের একাংশের। কেউ কেউ জানালেন, সে সময়ে যাঁকে পাশে থেকে লড়াই করতে দেখেছেন তাঁর সম্পর্কে আজ যা সামনে আসছে সে সব জেনে হতবাক তাঁরা। একযোগে পার্থর শাস্তির দাবিতে সরব আন্দোলনকারী কৃষকদের এই অংশ। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটা কারখানার জন‍্য জমি অধিগ্ৰহণকে কেন্দ্র করে কৃষিজমি আন্দোলন গড়ে ওঠে। তৃণমূল-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেখানকার কৃষকদের পাশে দাড়িয়ে আন্দোলনকে কার্যত ঐতিহাসিক রূপ দেয়। মমতা বন্দ‌্যোপাধ‍্যায়, পার্থ চট্টোপাধ‍্যায়,মদন মিত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ‍্যায়,দোলা সেনের একাধিক নেতানেত্রী সেই সময় নিয়মিত যাতয়াত করতেন সিঙ্গুরের বিভিন্ন গ্ৰামে। আন্দোলনের রূপরেখা তৈরী, একের পর এক বৈঠক, মিছিলকে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কার্যত আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁদের। আজ তাঁদেরই এক জনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ! সিঙ্গুরের গোপালনগর গ্ৰামের আন্দোলনকারী আর এক  শ্রীকান্ত ঘোষ বলেন, ‘লজ্জা। আমরা যে পার্থ চট্টোপাধ‍্যায়কে দেখেছি, এ তো তার উল্টো। আমাদের এখন লজ্জা লাগে যেস এই মানুষটা আমাদের এখানে আন্দোলন করতে এসেছিল। আমরা তো এটা দেখে দিদিকে আনিনি। এতো সিপিএমের থেকেও ভয়ঙ্কর। আমরা চাইছি সরকারের পতন হোক। কারণ দিদির বাড়ি গেলে এখন চিনতে পারেন না। এখন বোঝা যাচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ‍্যায় লুঠ করতে এসেছিলেন সিঙ্গুরে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে সেখানে। সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘সেই সময় আন্দোলন হল চাষের জমিতে শিল্প নয়। তাই শিল্প করতে দিল না। তার পর কোর্টে নির্দেশ অনুযায়ী জমি চাষ যোগ‍্য করে দিল না। তাই এখন সিঙ্গুরের কৃষকেরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে।’ ছেড়ে কথা বলেনি তৃণমূল শিবিরও। সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কংগ্ৰেস সভাপতি গোবিন্দ ধাড়ার কথায়, ‘সিঙ্গুরের লোক ২০২১-এ জবাব দিয়েছেন। ২০২২-এ পঞ্চায়েত ও ২০২৪ এর লোকসভাতেও যোগ‍্য জবাব দেবেন।’