মেট্রো স্টেশনে লক্ষণীয় ভাবে কমে গিয়েছে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা অধিকাংশ স্টেশনে একটি, বড়জোর দু’টি কাউন্টার খোলা থাকছে

নিজস্ব সংবাদদাতা : অতিমারি-পর্বে টিকিট কাউন্টারে ভিড় এড়াতে শুধু স্মার্ট কার্ডে যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু রেখেছিলেন কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তার পরে ধাপে ধাপে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও মেট্রো স্টেশনে লক্ষণীয় ভাবে কমে গিয়েছে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা। অধিকাংশ স্টেশনে একটি, বড়জোর দু’টি কাউন্টার খোলা থাকছে। এমনকি এসপ্লানেড, দমদম বা কালীঘাটের মতো বড় স্টেশনে যেখানে ন্যূনতম পাঁচ-ছ’টি কাউন্টার খোলা থাকত, সেখানেও এখন দিনের ব্যস্ত সময়ে বড়জোর দু’টি বা তিনটি কাউন্টার খোলা থাকছে। টোকেন কিনতে গেলে যাত্রীদের দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিনের রাস্তা। অন্য দিকে, স্মার্ট কার্ড রিচার্জের জন্য যাত্রীদের মেট্রোর অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দিচ্ছেন আধিকারিকেরা। রীতিমতো টেবিল-চেয়ার পেতে বসে যাত্রীদের ধরে ধরে অ্যাপ ডাউনলোডের পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের।কিন্তু, মেট্রোয় দ্রুত হারে কাউন্টার কমে আসা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে যাত্রী মহলে। দৈনন্দিন মেট্রো সফরে স্মার্ট কার্ডের যাত্রী আগের তুলনায় বাড়লেও টোকেন ব্যবহার করেন, এমন যাত্রীও নেহাত কম নয়। ওই সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মূলত তাঁরা ঘোর সমস্যায় পড়ছেন। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের স্বয়ংক্রিয় টিকিট ভেন্ডিং মেশিন এবং অ্যাপ ব্যবহার করার পথ বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।মেট্রো সূত্রের খবর, বিভিন্ন স্টেশনে কর্মীসঙ্কটের কারণেই কাউন্টারের সংখ্যা কমাতে হয়েছে। ২০১৮ সালের পরে মেট্রোয় সে ভাবে কর্মী নিয়োগ হয়নি। অথচ, নতুন স্টেশন চালু হওয়ায় সেখানে কর্মী জোগান দিতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ছাড়াও উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর স্টেশন চালু হয়েছে। শিয়ালদহ পর্যন্ত পরিষেবা সম্প্রসারিত হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্টের। ওই মেট্রোয় ইতিমধ্যেই যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি সেক্টর ফাইভ স্টেশনে ভিড় উপচে পড়তে দেখা গিয়েছে। সমস্যা সামলাতে সেখানেও যাত্রীদের অ্যাপ ডাউনলোড করার অথবা ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, চলতি বছরেই তারাতলা-জোকা রুটে পরিষেবা শুরু করার ভাবনা রয়েছে মেট্রোর। ওই পথের চারটি স্টেশনের জন্য কর্মী দিতে হলে তাঁদের নিতে হবে বর্তমান কর্মীদের থেকেই। মেট্রোর আধিকারিকেরা বলছেন, নতুন নিয়োগ না হওয়াতেই কর্মীসঙ্কট এমন ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছনোর মুখে।

     

    পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই বেশির ভাগ যাত্রীর কাউন্টারে আসার প্রবণতা ঠেকাতে মরিয়া মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন স্টেশনে সারা দিনের মোট স্মার্ট কার্ড রিচার্জ এবং টোকেন বিক্রির অন্তত ১৫ শতাংশ যাতে ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে হয়, সেই লক্ষ্যমাত্রা কর্মীদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। সংগঠনগুলির অভিযোগ, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে কর্মীদের। ‘কোটা’ পূরণ করার চাপ থাকাতেই কাউন্টার বন্ধ রাখা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।যদিও মেট্রোকর্তাদের দাবি, কম কর্মী নিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকল্প হিসেবে ভেন্ডিং মেশিন এবং অ্যাপ ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘মেট্রো রেল মেন্স ইউনিয়ন’-এর জ়োনাল সম্পাদক শিশির মজুমদার বলেন, ‘‘প্রায় দেড়শো কর্মীর অভাব রয়েছে। রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তবে, কবে কর্মী মিলবে, সেই আশ্বাস এখনও মেলেনি।’’