দার্জিলিংকে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে দিচ্ছে সিকিম

নিজস্ব সংবাদদাতা: বেহাল জাতীয় সড়ক। ধসে বিধ্বস্ত অন্যান্য একাধিক পথ। কিন্তু চলতি পর্যটন মরশুমে দার্জিলিংকে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে দিচ্ছে সিকিম। রোজ 10নম্বর জাতীয় সড়কে পর্যটকদের গাড়ির ভিড়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, শৈলরানি দার্জিলিং কি তার কৌলিন্য হারাচ্ছে? এই ট্রেন্ড দেখে কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল দার্জিলিংয়ের ব্যবসায়ীদের। সিকিমের গাড়ি ভাড়ার জুলুম নিয়ে উদ্বিগ্ন টুর অপারেটার, পর্যটকরাও। সিকিম পারলে দার্জিলিং কেন পিছিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে, শুরু হয়েছে সেই চর্চাও। সিকিমকে পিছনে ফেলতে পুজো পর্যটনে দার্জিলিংকে ব্র্যান্ডিং করতে শুরু হয়েছে উদ্যোগ। পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বাংলার দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এবারের উৎসব একটু অন্য মাত্রা পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুজোর সময় দার্জিলিংকে সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিকল্পনার স্তরে থাকায় কী কী হবে, এখনই স্পষ্ট বলা সম্ভব নয়।

     

    বৃষ্টির শুরু হতেই সিকিম যাওয়ার পথে ফিরে এসেছে ধসের চেনা ছবি। প্রায় প্রতিদিনই ধস নামছে সিকিমের লাইফলাইন হিসেবে স্বীকৃত 10নম্বর জাতীয় সড়কে। কোনওদিন 20 মাইলে, কোনওদিন 29 মাইলে দিনের যে কোনও সময় রাস্তার ওপর গড়িয়ে পড়ছে মাটি-পাথর। সোমবার ধস নামে কালিঝোরায়। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ভোগে পড়তে হয় পর্যটকদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে সময় লাগছে সাত ঘণ্টা বা তারও বেশি। তারপরেও প্রত্যেকদিন 10 নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির লম্বা লাইন। তার মধ্যে অধিকাংশই পর্যটকদের গাড়ি। নেটের সাহায্যে ধস, বেহাল রাস্তার টাটকা খবর নিমেষে পৌঁছে যায় সাধারণ মানুষের কাছে। এরপরেও কেন পর্যটকরা পাহাড় পছন্দে সিকিমকে বেছে নিচ্ছেন? সম্প্রতি দার্জিলিং এবং সিকিম- দুই পাহাড়ি এলাকাতেই বেড়াতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের মহম্মদ টিটো সিদ্দিক। তাঁর বক্তব্য, দুই পাহাড়ের সৌন্দর্য্যের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে পর্যটনে সিকিম অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু গাড়ি ভাড়ার জুলুমবাজিটা বন্ধ করা উচিত।

     

    পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, সময়ে সঙ্গে সিকিমে যেমন ডেস্টিনেশন বেড়েছে, তেমনই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেড়েছে থাকার জায়গা। ফলে সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনই রুম বুক করার ক্ষেত্রে সমস্যাও কমেছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের এই ক্ষেত্রেই দার্জিলিং পিছিয়ে পড়ছে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য।

     

     

     

    দার্জিলিংয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ম্যালকেন্দ্রিক পর্যটন। অধিকাংশ পর্যটকই ম্যালের আশপাশের এলাকায় থাকতে চান। কিন্তু জায়গার অভাবে প্রয়োজনীয় হোটেল বা রুম তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। সিকিমে কিন্তু এই সমস্যা নেই। গ্যাংটকের পাশাপাশি পর্যটকদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে লাচেন, লাচুং, ছাংগু লেক, ইযাংথাং, পেলিংয়ের মতো একাধিক জায়গা। উত্তর সিকিমের পাশাপাশি পশ্চিম সিকিমেও এখন ছুটছেন পর্যটকরা।

     

    হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, রুরাল এলাকায় আমাদের প্রচুর ডেস্টিনেশন রয়েছে। সেই জায়গাগুলিকে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি ডুয়ার্সকে ফোকাস করতে হবে। আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে এই কাজগুলির ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হচ্ছে।

     

    দার্জিলিংয়ে যেখানে প্রায় এক হাজারের মতো রুম রয়েছে, সেখানে দুহাজারের বেশি ঘর রয়েছে সিকিমে। দার্জিলিংয়ে হোটেল ব্যবসায়ী পার্থ গুহ বলছেন, অধিকাংশ পর্যটক ম্যালের কাছাকাছি থাকতে চান। দার্জিলিং পাহাড়ের ক্ষেত্রে এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নির্জন জায়গাগুলিতে থাকা হোমস্টের প্রতিও পর্যটকদের এখন উৎসাহ বাড়ছে। তবে পরিকাঠামো উন্নয়নে আরো জোর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।