|
---|
লুতুব আলি : কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি বিজড়িত ধূমকেতু আবার প্রকাশিত হতে চলেছে। ধূমকেতু পত্রিকার শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি সোনালী কাজী ধূমকেতু কে নব ধূমকেতু নাম দিয়ে নব কলেবরে প্রকাশ করার কাজে উদ্যোগী হয়েছেন। সোনালি কাজী জানান, নব ধূমকেতু পাঠকদের কাছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। চুরুলিয়ায় নজরুল একাডেমীর পাশাপাশি সোনালী কাজী ১৯৯০ সাল থেকে আসানসোলে গড়ে তুলেছেন দোলনচাঁপা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দোলনচাঁপার শাখাগুলি হল দুর্গাপুর,চুঁচুড়া, কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় তাদের এই শাখাগুলোকে আরো ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। দোলনচাঁপার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ ও ভাবধারাকে তুলে ধরা। এই সংগঠনটি অনেক জনসেবামূলক কাজ করে চলেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকা ১৯২২ সালের আগস্ট মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়। ধূমকেতু প্রকাশ হওয়ার অব্যবহিত পর থেকেই ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে সময় ব্রিটিশ বিরোধী লেখা বিপ্লবীদের এক ভিন্ন মাত্রায় নতুনভাবে অক্সিজেন যোগায়। বিদ্রোহী কবিতা ও এই সময় লেখা হয়। বিদ্রোহী কবিতাটি স্বাধীনতা আন্দোলনে একপ্রকার শ্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হত। উল্লেখ্য, নজরুল ইসলামের ধূমকেতু পত্রিকা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আশীর্বাণী লেখেন। আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আশীর্বাণী টি ধুমকেতু প্রতি সংখ্যায় থাকতো। ব্রিটিশ সরকার ধুমকেতু পত্রিকাটিকে বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়াও বিশের বাঁশি, ভাঙার গান, আনন্দময়ীর আগমনে কবিতা ও নিষিদ্ধ হয়। বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে নজরুল ইসলামকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে আনে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে নজরুল একটানা অনেক দিন অনশন করেন। ইংরেজ সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেবল লেখালেখি করতে গিয়ে বারংবার কারাবন্দি হওয়া বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য নজির। এক সাক্ষাৎকারে সোনালি কাজী বলেন, ১৯২২ সালটি এক ঐতিহ্যের বছর। বিদ্রোহী কবিতা শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। দুই বাংলার পঞ্চাশ জন কবিদের নিয়ে শত কবিতায় নজরুলের বই খুব শীঘ্রই প্রকাশ হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের নজরুল একাডেমী শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে। দোলনচাঁপার অন্যতম সদস্য সুতপা চৌধুরী জানান, ৩০ এপ্রিল ও ১লা মে দুর্গাপুরের দোলনচাঁপা শাখা সম্পূর্ণ নজরুল ভিত্তিক এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অন্যদিকে প্রায় তিন দশক ধরে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কলকাতায় নিরন্তর চর্চা করে চলেছেন মীরাতুন নাহার। মীরাতুন নাহার যখন কলেজ ছাত্রী ১৯৬৯ সালে স্বয়ং নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বিদ্রোহী কবির চিন্তা, চেতনা, লোক সৃষ্টি ও শিশু-কিশোর ভাবনায় সমৃদ্ধ একটি সাময়িকী প্রকাশ করছেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে মীরাতুন নাহার বলেন, নজরুল গোটা দেশের উন্নয়ন চেয়ে ছিলেন। কবিকে অসহ্য অপমান সহ্য করতে হয়েছিল। নজরুলের প্রতি যারা সম্মান দেখাচ্ছেনা তারাই অপরাধী। কাজী নজরুল ইসলামের উত্তরসূরীরা ধূমকেতু পত্রিকা কে নবরূপে প্রকাশ ঘটানোর কাজে যে-হাত লাগিয়েছেন, এই উদ্যোগকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।