ল্যাব থেকে এক গবেষক ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল নদিয়ার হরিণঘাটায়

নিজস্ব সংবাদদাতা : ল্যাব থেকে এক গবেষক ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল নদিয়ার হরিণঘাটায়। বালিন্দি ৭নম্বর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাব থেকে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়। পাশ থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোটও। মৃত ছাত্রের নাম শুভদীপ মিত্র (২৯)। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কেন এই আত্মহত্যা? সুইসাইট নোটটি হাতে আসার পরই পরতে পরতে উঠে আসছে বিস্ফোরক তথ্য। চিঠিতে লেখা একটি নাম। ডক্টর চিরঞ্জীব মিত্র। তিনি আদতে শুভদীপের প্রফেসর। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাকি পড়ুয়াদের অভিযোগ, শুভদীপের মৃত্যুর জন্য এই প্রফেসরই দায়ী। গবেষণায় ঠিক মতো সাহায্য করছিলেন না প্রফেসর, মানসিক অবসাদ তৈরি হচ্ছিল শুভদীপের। সেকথা বন্ধুদেরও জানিয়েছিলেন তিনি। আর তাতেই চরম সিদ্ধান্ত, দাবি বাকি গবেষক পড়ুয়াদের।

    ঘটনাটি গত সোমবারের। দুপুরে সাধারণত ল্যাবের দরজা খোলা থাকে। কিন্তু সোমবার ল্যাবের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ অবস্থায় দেখেছিলেন বাকি গবেষক ছাত্রছাত্রীরা। পরে তাঁদের সন্দেহ হয়। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন. মাটিতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন শুভদীপ। মুখ থেকে তাঁর গ্যাজলা বের হচ্ছিল। মুখ প্লাস্টিক দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। তাঁকে উদ্ধার করে গাড়ুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কল্যাণী জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে। শুভদীপের প্যান্টের পকেট থেকে পাওয়া যায় সেই সুইসাইড নোটটি।জানা গিয়েছে, দমদমের বাসিন্দা শুভদীপ গত সাত বছর ধরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। প্রফেসর চিরঞ্জীবের তত্ত্বাবধানেই তিনি গবেষণা করছিলেন। সুইসাইড নোটে তাঁরই নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কেন? শুভদীপের বন্ধুদের দাবি, প্রফেসরের কাছে থেকে গবেষণায় ঠিক মতো সাহায্য পাচ্ছিলেন না শুভদীপ। ফলে তাঁর ওপর মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছিল। সেই অবসাদ থেকেই আত্মহত্যা বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তাঁরা।

    শুভদীপ যে পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে, সেটিও অত্যন্ত ভয়ানক। ল্যাবে রাখা ছিল স্ক্যাবিজের ট্যাবলেট। শুভদীপের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। দুটি সেবন করেন। তারপর তিনি মুখে প্লাস্টিক প্যাঁচান বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ তাঁর লক্ষ্য ছিল শরীরে, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করা। যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তাঁর শরীর পুরো নীল হয়ে গিয়েছিল। ঠোঁট কালচিটে। মনে করা হচ্ছে, সেগুলি সেবনের পর বিষাক্ত আরও কিছু সেবন করে থাকতে পারেন শুভদীপ।

    সোমবারই হরিণঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি পুলিশ। ল্যাবে যাতায়াত করছেন অভিযুক্ত প্রফেসর। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাকি গবেষক পড়ুয়ারা। এই ঘটনায় ডিরেক্টর সৌরভ পালের ভূমিকাতেও ক্ষুব্ধ তাঁরা। কারণ তিনিও অভিযুক্তকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে দিচ্ছেন। মঙ্গলবারই ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন গবেষক পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে।

    রিসার্চ কমপ্লেক্স ও লেকচারার কমপ্লেক্সের সামনে বসে আন্দোলন চালাচ্ছেন গবেষক পড়ুয়ারা। তাঁদের একটাই দাবি, অবিলম্বে শুভদীপ রায়ের মৃত্যুতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে উচিত শাস্তি দিতে হবে। শুভদীপের এক বন্ধুর দাবি, “যেখানে সুইসাইড নোটে নাম উল্লেখ রয়েছে, সেখানে পুলিশের পদক্ষেপ করতে অসুবিধা কোথায়? এত ঘণ্টা পরেও কেন কোনও ব্যবস্থা করেনি পুলিশ?” যদিও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।