শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতি কাণ্ডে এবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজর

নিজস্ব সংবাদদাতা:শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতি কাণ্ডে এবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজর। গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গে শিক্ষা দপ্তরে যত কেলেঙ্কারি হয়েছে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তার শীর্ষে রয়েছে। দলের নেত্রীকে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় (স্লেট) মেধাতালিকায় ওই নেত্রীর নাম শেষ দিকে থাকলেও মন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় থাকার সুবাদেই তিনি চাকরি পান। পাশাপাশি, কম্পিউটার সেন্টারের এক কর্মীকে রাতারাতি কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি করে আনা হয়েছিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই তৎকালীন এক শীর্ষস্তরীয় আধিকারিকের পরিবারের পাঁচজনকে একইসঙ্গে চাকরি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র ডক্টরেট করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগেই ওই আধিকারিক ওই চাকরিগুলি আদায় করেন।

     

    বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশ বলছেন, এখানে একবার হাত দিলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে। ২০১৬-১৭ সাল থেকে এখানে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। এখানেই শেষ নয়, শিলিগুড়ি এবং রায়গঞ্জে নার্সিংহোম খোলার পরিকল্পনাও ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

    অধ্যাপক, শিক্ষক থেকে সাধারণ কর্মচারী নিয়োগে শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতির জাল প্রতিদিনই একটু একটু করে প্রকাশ্যে আসছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও তাঁর হাত কতদূর বিস্তৃত ছিল সেই তথ্যও ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। পার্থর হয়ে উত্তরবঙ্গের অঘোষিত রাজধানী শহর শিলিগুড়ি থেকেই এখানকার দুই ব্যবসায়ী, একজন ঠিকাদার এবং পরবর্তীতে এক শিক্ষক নেতাও এই চক্রে যুক্ত হয়ে পড়ে পুরো কারবার দেখতেন। কাকে বদলি করতে হবে, কোন নেতার পরিবারের সদস্যকে চাকরি দিতে হবে, কাকে দূরবর্তী স্থান থেকে বাড়ির কাছে এনে চাকরি দিতে হবে সেই সমস্ত কিছুই দেখভাল করা হত। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্দরেও এই চক্রের হাত ছিল। ২০১৮ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের এক কর্মীই এই চক্রের মধ্যমণি। সমস্ত সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কী নিতেন, কত টাকার খেলা হত সেই প্রশ্নও উঠছে।

     

    বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেত্রীকে রাজনীতি থেকে তুলে স্লেট-এ বসানো হয়েছিল। সেই নেত্রীর নাম মেরিট লিস্টে ১২৯ নম্বরে ছিল। কিন্তু মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রথম দিকের প্রার্থীদের টপকে তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক নিজের মেয়েকে কলেজ থেকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টিং দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারের আরও চারজনকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে নিজের শ্যালিকার মেয়ে সহ অন্যরা রয়েছেন। এছাড়াও স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে হাইস্কুলে চাকরিরত মাস্টার অফ বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন (এমবিএ) পাশ করা শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (এমসিএ) বিভাগে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

     

     

    বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেরই খবর, গত চার-পাঁচ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ভূরিভূরি চাকরি, বদলি এবং পদোন্নতিও হয়েছে। সমস্ত কিছুর পিছনেই পার্থবাবুর প্রচ্ছন্ন মদতের অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র শিলিগুড়ির এক নেতার কথামতোই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত অনিয়মেই পার্থ সিলমোহর দিতেন। এমনকি শিলিগুড়ির ওই নেতার সুপারিশ মেনেই গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে শতাধিক পদে নিয়োগও করা হয়েছে।

    পার্থ শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যেও হাত বাড়িয়েছেন বলে সূত্রের খবর। উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন এক উপাচার্যকে ব্যবসায় পার্টনার করে শিলিগুড়ির শিবমন্দির এবং উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর রায়গঞ্জে নার্সিংহোম খোলার পরিকল্পনা হয়েছিল যা বাস্তবায়নের পথেই ছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা গোটা বিষয়ে নজর রাখছেন। এই দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা শীঘ্রই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে নথিপত্র ঘাঁটতে গিয়ে আরও কত রহস্য প্রকাশ্যে আসবে সেই আশঙ্কাতেই পার্থর এখানকার ঘনিষ্ঠরা সময় গুনছেন।