একের পর এক বহুতল হচ্ছে দেখে বিস্মিত হন মুখ্যমন্ত্রীও

নিজস্ব সংবাদদাতা : এ বার জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন খড়্গপুরে, সরকারি কটেজে। শিল্পতালুকে ওই কটেজের অদূরেই বহুতল মাথা তুলেছে দেখে বিস্মিত হন মুখ্যমন্ত্রীও। দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে ওই বহুতলের অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)-এর চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়কে। তবে দায় ঝেড়ে ফেলে দীনেন জানিয়ে দেন, ওই বহুতল যখন হয়েছে, তখন চেয়ারম্যান ছিলেন মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি। সূত্রের খবর, বহুতল যে এলাকায় রয়েছে, সেটি পুর-এলাকা কি না, খড়্গপুরে পৌঁছেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানির কাছে তা জানতে চায়েন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক জানান, এলাকাটি এমকেডিএ-র।
জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও একের পর এক বহুতল হচ্ছে। অভিযোগ, বেশিরভাগই বেআইনি। কেউ চার-পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে আট-দশতলা, আরও উঁচু বাড়ি বানাচ্ছেন। শহরে প্রোমোটারদের দাপট শুরু হয়েছে। চকে, পল্লিতে, নগরে মাথা তোলা একের পর এক বহুতলে পুরসভার নজরদারিই নেই বলে অভিযোগ। পুরসভার অবশ্য দাবি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত এক ডজন নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটে নোটিস পাঠানো হয়েছে। নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পুর-নির্দেশ উড়িয়ে দিব্যি কাজ চলছে। পুরসভাও মানছে, নিমতলাচক, জেলা পরিষদ রোড, রবীন্দ্রনগর, বার্জটাউন, অরবিন্দনগর, কুইকোটা প্রভৃতি এলাকায় এমন কয়েকটি বহুতল গড়ে উঠেছে এবং এখনও উঠছে, যেগুলি বেআইনি।গত কয়েক বছরে শহরে বেশ কয়েকটি দশতলা বহুতল হয়েছে। জেলা পরিষদ রোডের ধারে এখন একটি ১২ তলা বহুতল হচ্ছে। কালেক্টরেট মোড়ের অদূরেও একাধিক বহুতল নিয়ম না মেনেই হচ্ছে বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক প্রশাসনিক বৈঠকের ফাঁকে এ নিয়ে পুরপ্রধান সৌমেন খানের সঙ্গে কথা হয়েছে জেলাশাসকের। জেলাশাসকের নির্দেশ, শহরে বেআইনি বহুতল যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পুরসভাকে। পুরসভা সূত্রে খবর, তাদের দল বিভিন্ন বহুতলে যাচ্ছে। মাপজোক করছে। রিপোর্ট জমা পড়বে পুরসভায়। পুর-দলেরও পর্যবেক্ষণ, অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম না মানার অভিযোগ সঠিক। এক পুরকর্তার দাবি, ‘‘দেখা যাচ্ছে, অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’’ নকশার সঙ্গে জমি ছাড়ের বাস্তবে মিল নেই। আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। অগ্নিসুরক্ষা বিধির পরোয়া না করে গলির মধ্যে তৈরি হচ্ছে উঁচু বাড়ি। অনেক জায়গায় দু’-চার কাঠা ফাঁকাতেও মাথা তুলছে বহুতল।
শহরে গুঞ্জন, শাসক দলের একাংশ নেতা, পুরপ্রশাসনের একাংশের মদতেই কিছু প্রোমোটার নিয়মের ধার ধারছেন না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রোমোটার শোনাচ্ছেনও, ‘‘কাকে কত চাঁদা দিই, সব ডায়েরিতে লিখে রাখি। বেশি কড়াকড়ি করলে সব ফাঁস করে দেব।’’ আর পুরপ্রধান সৌমেনের সাফাই, ‘‘যা হওয়ার আগে হয়েছে (বিগত বোর্ডের আমলে)। এখন আর কোনও বেনিয়মই বরদাস্ত করা হয় না।’’ ‘কনফেডারেশন অফ পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আনন্দগোপাল মাইতি প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁর একাধিক বহুতলে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। এ জন্য তাঁকে নোটিস ধরানো হয়েছে। আনন্দগোপালের অবশ্য দাবি, ‘‘অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী কাজ হয়েছে। বেআইনি নির্মাণ হয়নি।’’
এ প্রসঙ্গে ‘পশ্চিম মেদিনীপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সাধারণ সম্পাদক চন্দন বসুর পরামর্শ, ‘‘একটা সলিড পলিসি করা দরকার। পুর-উদ্যোগেও তা হতে পারে, যার কথা সবাই জানবে, বুঝবে। তাহলেই বহুতল তৈরিতে একটাশৃঙ্খলা আসবে।’’