পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ’ তৃণমূল সম্পর্কিত নতুন হোর্ডিং নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

নিজস্ব সংবাদদাতা : পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ।’ তৃণমূল সম্পর্কিত নতুন হোর্ডিং নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। দিন কয়েক আগেই যেমন জল্পনা তৈরি করেছিল আরও একটি হোর্ডিং। যাতে লেখা ছিল— ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।’ দক্ষিণের পরে উত্তর কলকাতা। ব্যানার সরাসরি তৃণমূলের পক্ষে নয়, তবে তৃণমূল প্রসঙ্গেই। দক্ষিণের হোর্ডিংয়ে ছবি ছিল শুধুই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। আর উত্তরের ছবিতে অভিষেকের পাশাপাশি রয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দক্ষিণের হোর্ডিংয়ে ছিল ‘নতুন’ তৃণমূল গড়ার ডাক। আর উত্তর চাইছে ‘নতুন’ ও ‘পুরাতন’-এর সমন্বয়।প্রসঙ্গত, একটা সময় পর্যন্ত তৃণমূল মানেই ‘দক্ষিণ কলকাতার দল’ মনে করা হত। এখনও মুখ্যমন্ত্রী থেকে মেয়র— সকলেই দক্ষিণের বিধায়ক। দলের প্রথম সারির নেতারাও মূলত দক্ষিণের। তৃণমূলের মধ্যে একটা কথা চালু রয়েছে যে, উত্তরের নেতা হয়ে দলে ‘বেশি উঁচুতে ওঠা যায় না’। রাজ্যব্যাপী তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধির পরেও উত্তর কলকাতার নেতাদের মুখে সেই ‘আক্ষেপ’ শোনা যায়। তাই শনিবার রাত থেকে কলকাতায় যা হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে দক্ষিণকে উত্তরের ‘জবাব’ বলেও মনে করেছেন অনেকে।গত সোমবার স্বাধীনতা দিবসের দিনে নজরে আসে দক্ষিণ কলকাতার হোর্ডিং। যে হোর্ডিং বলেছিল, আগামী ছ’মাসের মধ্যে আসছে নতুন তৃণমূল। লেখা হয়, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল’ এবং ‘ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।’ এটি কোনও দলীয় ঘোষণা ছিল না। কিন্তু অভিষেকের ছবি-সহ বড় বড় হোর্ডিং দেখা যায় দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে। প্রচারে ‘আশ্রিতা’ ও ‘কলরব’ নামে দু’টি সামাজিক সংগঠন। যার সভাপতি কালীঘাট-রাসবিহারী অঞ্চলের তৃণমূল নেতা কুমার সাহা। সে দিন থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে ওই হোর্ডিং। তৃণমূল বিষয়টিকে ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিলেও এটি শাসকের ‘মুখ বদল’-এর সূচনা বলেই দাবি করে বিরোধী শিবির। কেউ কেউ আবার মহারাষ্ট্রের মতো এই রাজ্যেও শাসক দলে ভাঙন ধরানোর জন্য বিজেপি ‘শিন্ডে-ছক’ করছে বলে প্রশ্ন তোলে।কিছু দিন আগে উত্তরবঙ্গের একটি সভায় ‘ছয় মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূল’ কথাটি বলেছিলেন অভিষেক। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও তাঁর মুখে ‘নতুন তৃণমূল’ কথাটা শোনা গিয়েছিল। এর পরে পরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল-কাণ্ড অনেকটাই ‘অস্বস্তি’তে ফেলেছে তৃণমূলকে। তার পরে সত্যিই অভিষেকের নেতৃত্ব ‘নতুন’ তৃণমূল তৈরি করে সংস্কারের উদ্যোগ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বার সেই প্রশ্নে নতুন ইন্ধন জোগাল উত্তরের হোর্ডিং। উত্তরের হোর্ডিং প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। তবে তাতে আপত্তিকর কিছু রয়েছে বলেও শুনিনি। আর ওটা দলের পক্ষ থেকে লাগানো হয়নি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসেন এমন একটি সামাজিক সংস্থা লাগিয়েছে।’’রবিবার কয়েকটি হোর্ডিং দেখা যায় রামমোহন রায় রোড সংলগ্ন সুকিয়া স্ট্রিট অঞ্চলে। ওই হোর্ডিংগুলিতে মমতা ও অভিষেকের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘পুরাতনই ভিত্তি, নতুনই ভবিষ্যৎ।’ তার নীচে লেখা, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে, থাকবে।’ যদিও দলীয় ভাবে এই ব্যানার নয়। মূলত ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই হোর্ডিং দেখা যায়। প্রচারক হিসাবে নাম রয়েছে ‘২৮ বাংলা সিটিজেনস ফোরাম’। কেন এই ফোরাম, তা নিয়ে ওই ফোরামের এক সদস্যের যুক্তি, ‘‘দিদির বিকল্প কিছু নেই। তিনিই প্রধান মুখ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন হিসাবে আজকে যে ভাবে লড়ছেন সেটা ভাল লাগছে।’’ তিনি জানান, দলের তরফে এই ব্যানার নয়। সিটিজেনস ফোরামের তরফে।উঠে আসছে অন্য এক তত্ত্বও। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপিতে নতুনদের ‘গুরুত্ব’ বাড়তে শুরু করে। আরও আগে মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই যা শুরু হয়েছিল সেটা বড় চেহারা নেয় আরও অনেকে অন্য দল থেকে গেরুয়া শিবিরে আসায়। বিজেপির ‘আদি’ বনাম ‘নব্য’ লড়াই আরও বেশি করে সামনে আসে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আশাভঙ্গের পরে। এখন স্তিমিত হলেও সে লড়াই থামেনি। এ বার তৃণমূলেও কি সেই ছোঁয়া! ‘নতুন’ তৃণমূলে ‘পুরাতনরা’ ব্রাত্য হতে পারেন বলে ভয়! তাতেই কি উত্তরের হোর্ডিংয়ে সমন্বয়ের বার্তা? এমন প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে।আরও একটা তুলনা এসেছে রাজনৈতিক মহলে। বাম জমানার প্রায় শেষ লগ্নে তৃণমূলের সিঙ্গুর আন্দোলন যখন তুঙ্গে উঠছে, তখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্লোগান তুলেছিলেন, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।’ উত্তরের হোর্ডিংয়ে সেই বাম স্লোগানের স্পষ্ট ছায়া নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক আলোচনা।