|
---|
নতুনগতি প্রতিবেদক,মালদাঃ৩০ জুন
ভুয়ো ইডি’র আধিকারিক সেজে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। প্রতারণার ফাঁদে শাসক দলের এক যুব তৃণমূল নেতা।
বিচার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ ওই যুব তৃণমূল নেতা।
অভিযোগের ভিত্তিতে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা, মালদার ইংরেজবাজার থানার পুলিশের।
ঘটনার সূত্রপাত ঠিক একবছর আগে।গতবছরের ৩রা জুলাই আনুমানিক রাত আটটা নাগাদ হঠাৎই তার নিজস্ব মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ দেখে চমকে উঠেন ইংরেজবাজার শহর যুব তৃণমূল সভাপতি শুভ্রদীপ দাস ওরফে বাপি।ইডি’র অ্যাসিস্ট্যান্ট বিউরো চিপের পরিচয় দিয়ে রঞ্জন বোস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে
ম্যাসেজ ও পরে ফোনে ওই যুব নেতাকে তলব করেন। তারপরে মূলত তারই নির্দেশে এই ভুয়ো এডি’র আধিকারিকের সাথে দেখা করতে কলকাতার সদর দপ্তরে ছুটে যান শহর যুব তৃণমূল সভাপতি। সেখানেই ইডি’র অফিসারের পরিচয় দিয়ে যুব তৃণমূল সভাপতির সাথে দেখা করেন রঞ্জন বোস নামে এক ব্যক্তি।
যুব তৃণমূল সভাপতি শুভ্রদীপ দাসের অভিযোগ, ” বিভিন্ন রকম আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দাবি করে রঞ্জন বোস নামে ওই ব্যক্তি”।অভিযোগ,দিন কয়েক পরেই ওই যুব তৃণমূল নেতা ভয় পেয়ে ২০১৯ এই ৯ই জুলাই দুই লক্ষ টাকা ওই অফিসারের হাতে দেন। পরবর্তীতে প্রায় মাস ছয়েক পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি প্রোফাইল ওই যুব তৃণমূল নেতার নজরে আসে। যেখানে রঞ্জন বোসের ছবি থাকলেও প্রোফাইলের নাম চন্দন রায় উল্লেখ ছিল। এরপরই সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করে ওই যুব তৃণমূল নেতার মনে। এরপরই তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন রঞ্জন বোস নামে কোন আধিকারিক ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর (ইডি) দপ্তরের সাথে যুক্ত নয়। তৎক্ষণাৎ তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন তিনি। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ওই ব্যক্তির খোঁজ শুরু করলে দেখা যায় তার নাম চন্দন রায়।দক্ষিণ দমদম এলাকার বাসিন্দা।তিনি আরো খোঁজখবর নিয়ে দেখেন তার স্ত্রী আশা দাস মালদা শহরের বাঙালটুলি লেনের বাসিন্দা।
সূত্রের খবর, এই এলাকা থেকেই ডেরা গেড়ে স্ত্রী আশা দাসকে সাথে নিয়ে প্রতারণার চক্র চালাতেন চন্দন রায় নামে ওই ব্যক্তি।বিভিন্ন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করায় ছিল মূল লক্ষ্য। আর সেই চক্রের অন্যতম শিকার হন মালদা শহর যুব তৃণমূল সভাপতি শুভ্রদীপ দাস বলে অভিযোগ। পরে প্রতারণার অভিযোগ এনে যুব তৃণমূল নেতা পুলিশের দ্বারস্থ হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাতে থাকে ওই প্রতারক দম্পতি। অভিযুক্ত দম্পত্তির সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান,তারা ইতিমধ্যেই ইংরেজবাজার থানার পুলিশের কাছে একাধিক বিষয়ে শুভ্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অন্যদিকে এই সমস্ত ঘটনা নজরে আসার পরই এই তৃণমূল নেতা প্রতারক চন্দন রায়ের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানার একাধিকবার অভিযোগ জানান। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ জামিন অযোগ্য ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ।
এই ঘটনার পাশাপাশি, এই ভুয়ো ইডি আধিকারিক তার স্ত্রী যেভাবে গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং কুৎসা চালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন এই নেতা।
প্রতারিত হওয়া ওই নেতার আইনজীবী প্রদীপ্ত কুন্ডু জানিয়েছেন ইতিমধ্যে আমরা ভুয়ো আধিকারিক এর বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। পাশাপাশি আমরা এদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলার প্রস্তুতি শুরু করেছি।
এবং গত দু-তিন দিনে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অভিযুক্ত দম্পতি বিভিন্ন মেসেজ ছড়িয়েছেন যা আমার মক্কেল শুভদীপ দাস তাদের পাঠিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। এই সমস্ত মেসেজ কখনোই আমার মক্কেল পাঠাননি। অভিযুক্তরা বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এই সমস্ত আপত্তিকর মেসেজ তৈরি করেছে। আমরা এই সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে দ্রুত সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবো।
অন্যদিকে মূল অভিযুক্ত চন্দন রায় কলকাতা থেকে ফোনে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা শুভ্রদীপ দাস এর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি কখনোই তাকে কোন মেসেজ করেন নি। এই নেতার সাথে কখনো তার ফোনে কথা হয়নি।
পরে চন্দন বাবু কে তার পাঠানো মেসেজ এর স্ক্রিনশট এবং ভয়েস রেকর্ড পাঠানোর পর তার সত্যতা জানার জন্য বারবার ফোন করলেও তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।
এপ্রসঙ্গে মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি জানান, এই প্রতারণার ঘটনা ইতিমধ্যেই আমি শুনেছি। কেন্দ্রীয় সংস্থার নাম করে এক শ্রেণীর দালাল চক্র তৃণমূল নেতাদের ভয় দেখানোর কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য তৃণমূল নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখার। আমাদের দাবি, ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।
অপরদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল জানান,কেন্দ্রীয় সংস্থাকে এক শ্রেণীর দালাল চক্র কালিমালিপ্ত করার চক্রান্ত করে। যারা এই ধরনের প্রতারিত হয়েছেন তারা দ্রুত পুলিশে অভিযোগ জানান। এবং প্রশাসনের উচিত এই ধরনের দালালচক্র কে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।