উন্নাও ধর্ষণ ও পরবর্তী ঘটনায় এগিয়ে এলেন সুপ্রিম কোর্ট

জাকির হোসেন সেখ, ৩১ জুলাই, নতুন গতি: উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ধর্ষণ ও তার পরবর্তী ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এলেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁকে লেখা নির্যাতিতার পরিবারের চিঠি কেন তাঁর হাতে পৌঁছায়নি তাকোর্টের রেজিস্ট্রি বিভাগ থেকে অবিলম্বে তাঁকে জানানো হোক। পাশাপাশি, উন্নাও ধর্ষণ নিয়ে যে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল, আগামীকাল ১লা আগস্ট বৃহস্পতিবার তিনি সেই মামলাও শুনবেন বলে জানিয়েছেন, ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, ধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্তরা মামলা গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটি উত্তর প্রদেশ থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার আবেদনও সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন।

    ২ বছর আগে উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ১৭ বছরের এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ওই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ধর্ষিতা অভিযোগ এনেছিলেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। চাকরি চাইতে গেলে বিজেপির ওই বিধায়ক ও তাঁর অনুচরেরা তাঁকে ধর্ষণ করেন। প্রথমে রাজ্য পুলিশ, পরে সিবিআই ওই ঘটনার তদন্ত করেছে। দুটি চার্জশিটও দাখিল হয়েছে। মামলার কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি।

    বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। ধর্ষিতার বাবার মৃত্যু হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। সুবিচারের দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গত বছর ওই তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। আর মাত্র তিনদিন আগে নিজের দুই মাসি ও আইনজীবীর সঙ্গে সড়কপথে লক্ষ্ণৌ থেকে রায়বেরিলি যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে এক ট্রাক এসে মুখোমুখি ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়িতে। ধর্ষিতা তরুণী ও তাঁর আইনজীবী ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলছ‌ও মারাত্মক আহত হন। নিহত হন গাড়িতে থাকা তাঁর দুই মাসি, যাঁর মধ্যে একজন আবার ওই ধর্ষণের মামলার সাক্ষী। দুর্ঘটনার পর দেখা যায় সেই ট্রাকের নম্বর প্লেটে কালি লেপা ছিল।
    ওই ঘটনার পর উন্নাও-কাণ্ড নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। ধৃত বিজেপি বিধায়ক কারাগারে থেকেও সাক্ষী লোপাটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পথ দুর্ঘটনায় সকলকে খুন করা তাঁরই পরিকল্পনা বলে মনে করা হচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি জেল থেকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এই চাপ সৃষ্টি এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত হুমকির কথাই গত জুলাই মাসে এক চিঠিতে প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার মা। একই চিঠি দেওয়া হয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং উত্তর প্রদেশ সরকারকেও। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছায়নি। আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চিঠি লেখার কথা আজই আমি সংবাদপত্রে পড়লাম। কাগজ পড়ে মনে হতে পারে চিঠিটি আমি চেপে গিয়েছি। বাস্তবে কিন্তু তা আদৌও নয়। মামলাটি উত্তর প্রদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার আবেদনও সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানানো হয়েছিল। আবেদনটি এখনো বিবেচনাধীন।’’
    যে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু এবং নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন, সেই ঘটনায় বিজেপির আরও এক রাজ্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তিনি মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, বিজেপির উন্নাও ব্লক সভাপতি অরুণ সিং। অরুণ সিংয়ের শ্বশুর আবার উত্তর প্রদেশের এক মন্ত্রী। এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি দল, যোগী আদিত্যনাথ সরকার এবং সরকারের প্রভাবশালী কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ যে সঠিক তা আর‌ও প্রমাণিত হচ্ছে মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন‌ও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায়। আশ্চার্যের বিষয়, অভিযুক্তদের বিজেপি দল থেকে বহিষ্কৃতও করা হয়নি।