স্ত্রীর সম্মুখ হতে স্বামীকে টানতে টানতে জঙ্গলে নিয়ে গেল বাঘ

বাবলু হাসান লস্কর, কুলতলী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : আবারও সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ গেল এক মৎস্যজীবী শিবপদ সরকারের। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার গোসাবা ব্লকের লাহেড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেড়ি গ্রামের বাসিন্দা শশাঙ্ক মন্ডল শিবপদ সরকার তার স্ত্রী রীনা সরকার তিনজন মৎস্যজীবী মঙ্গলবার ঝিলার ৫নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামীকে নৌকার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ টানতে টানতে নিয়ে গেল গভীর জঙ্গলে। মঙ্গলবার ২৩ আগস্ট সকালে সুন্দরবনের ভারত সীমান্তে বসিরহাট রেঞ্জের ৫ নম্বর ঝিলার জঙ্গলে এই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনারযেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওই মৎসজীবীর পরিবারের সদস্যরা।

    সুন্দরবনে কাঁকড়া মাছ ধরতে যাওয়া প্রাণের ঝুঁকি প্রতিমুহূর্তে, তারপরেও জীবন জীবিকার তথা পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যে  প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে যায়। যে কোনো সময় বাঘের কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকেই তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পেটের দায়ে জঙ্গলে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যান এই সমস্ত জেলেরা।

    মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রী ও শশাঙ্ক মন্ডল জেলের সঙ্গে ঝিলার ৫ নম্বর জঙ্গলে গিয়েছিলেন শিবপদ সরকার  সেসময়ে আচমকা শিবপদের ওপর চড়াও হয় একটি বাঘ। স্ত্রীর চোখের সামনে তাকে টানতে টানতে নিয়ে যায় গভীর জঙ্গলে। চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেননি শিবপদ এর সঙ্গে থাকা দুই জন।

    খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা শিবপদকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। তবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জঙ্গলে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

    এদিকে শিবপদের সন্ধান না পেয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন তার স্ত্রী ও আরেক সঙ্গী। বনবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিবপদের খোঁজ করা হচ্ছে। তাদের কাছে সরকারি অনুমতি ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।

    সুন্দরবনের বাসিন্দাদের কাছে এ ঘটনা নতুন নয়। জঙ্গলে প্রবেশের ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ থাকলেও পেটের দায়ে প্রতিদিন অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই প্রবেশ করেন জঙ্গলে। বাঘের কবলে প্রাণ হারান বহু মৎস্যজীবী। তা সত্ত্বেও প্রাণ হাতে করে জঙ্গলে যান তারা। একের পর এক এমনই মৎস্যজীবীর প্রাণ কাটছে বনবিবির বাহন আর তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় এই মুহূর্তে মৎস্যজীবীরা।