|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দল নেতাদের ধুন্ধুমার প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং বিরোধিতা সত্ত্বেও আজ ফাঁস হয়ে গেল তিন তালাক বিল বিরোধী দল নেতারা বা বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল একযোগে এর বিরোধিতা করলেও অবশেষে কোন কাজে আসলো না।
লিঙ্গ সাম্যের লক্ষ্যেই এই বিল আনা হয়েছে, তিন তালাক বিল নিয়ে বৃহস্পতিবার লোকসভায় বললেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তবে তিন তালাক বিল নিয়ে লোকসভায় আলোচনার সময় বিরোধী দল কংগ্রেস ও তাঁদের সহযোগী দল ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স এই বিলের বিরোধিতা করে। এই বিলের বর্তমান ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তাঁরা বলেন, এই বিলটির শিকার হতে হবে মুসলিম পুরুষদের। ফলে বিরোধীরা এই তিন তালাক বিলটিকে সংসদীয় কমিটির বিবেচনার জন্যে পাঠানোর দাবি তোলেন লোকসভার অধিবেশনে। ৩ তালাক বিলে যে প্রস্তাব দেওয়া আছে তা হল, যদি কোনও মুসলিম পুরুষ তাঁর স্ত্রী তিনবার “তালাক” কথাটি উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদে বাধ্য করে তবে ওই ব্যক্তির ৩ বছরের জেল হবে। শাসকদল বিজেপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দলের সমস্ত সাংসদদের লোকসভার অধিবেশনে উপস্থিত থেকে এই বিলের ভোটাভুটির জন্যে হুইপ জারি করা হয়।
“রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে এই বিষয়টি দেখবেন না। এটা বিচার ও মানবিকতার বিষয়…একজন মহিলার অধিকার ও ক্ষমতায়নের বিষয়…আমরা আমাদের মুসলিম বোনেদের অবজ্ঞা করতে পারি না”, তিন তালাক বিল প্রসঙ্গে বলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।
লোকসভায় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র কে সুরেশ সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, “এই ফৌজদারি কারণ দেখিয়ে পুলিশ ও সরকার এই আইনের অপব্যবহার করতে পারে। সুতরাং, আমরা দৃঢ়ভাবে এই অপরাধমূলক ধারার বিরোধিতা করব। যদি এরপরেও সরকার তাঁর নিজের জায়গায় স্থির থাকে তাহলে আমরা বিভক্তিকরণের কথা বলব”।
আগেই মনে করা হচ্ছিল যে, তিন তালাক বিলটি লোকসভায় খুব সহজেই পাশ হয়ে গেলেও সংসদের উচ্চকক্ষে এই বিলটির বিরুদ্ধে সরব হবেন বিরোধীরা। ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি রাজ্যসভায় নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের শাসক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের এই তিন তালাক বিলের বিরোধিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডও এই বিলের বিরোধিতায় সরব হতে পারে রাজ্যসভায়।
কংগ্রেস সহ বেশিরভাগ বিরোধী দলই মুসলিম পুরুষদের কারাদণ্ডের বিধানের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। বিরোধীরা দাবী করেন যে একটি গার্হস্থ্য ইস্যুতে এমন শাস্তিমূলক বিধান চালু করা যায় না যা মূলত মানুষের প্রবৃত্তিগত এবং তিন তালাক বিলের বর্তমান ধরণে শিকার হতে হবে মুসলিম সমাজকে।
এদিকে, শাসক দল বিজেপি ২০১৪ সালের থেকেও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনর্বার কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার তিন তালাক বিল পাশ করানোর ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করেছে লিঙ্গ সমতা রক্ষার্থে এই বিল পাশ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণের সামনে বারবার মোদি সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন যে এই বিল পাশ করানোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস”-অর্জনের লক্ষ্যও।
বুধবার কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সভাপতিত্বে এক বৈঠক করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস । সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বেশ কিছু বিলের সংশোধনী পাশ করানোর আগে ফের একবার স্ক্রুটিনির যে আবেদন রেখেছিল বিরোধীরা, যে তালিকায় রয়েছে এই তিন তালাক বিলটিও। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় যে বারবার অনুরোধের পরেও সরকার যদি তিন তালাক বিল সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে তবে পরিকল্পিত ভাবে সংসদের অধিবেশন বয়কট করবেন তাঁরা