জাতীয় সংগীতের সময় ‘আল্লাহু আকবর’ মিথ্যা প্রচারের শিকার তালদির স্কুল

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছবির মতো সুন্দর এক ছোট্ট জনপদ তালদি। কিন্তু তারমধ্যেই এই আধা-শহরের ‘তালদি মোহনচাঁদ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল’-এর কথিত এক ঘটনাকে শনিবার দু’একটি সংবাদপত্র সাম্প্রদায়িক আকার দিয়ে প্রকাশ করে। এর দ্বারা পাঠকদের মধ্যে খানিকটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই খবরটিতে বলা হয়, ক্যানিংয়ের ওই স্কুলে জাতীয় সংগীতের সময় নাকি কিছু ছাত্র বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধ্বনি দিতে শুরু করে!
বোঝাই যায়, ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি তোলা ছাত্ররা হচ্ছে মুসলিম। কিন্তু না। এর মধ্যে দেশপ্রেমের গল্পও আছে। জাতীয় সংগীতের সময় এই ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি সহ্য করতে না পেরে কেউ না এলেও প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন একজন। সে ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্র অরূপ হালদার। অরূপ এই ধ্বনির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা নাকি তাকে বেধড়ক মারধর করে। ওই দু’একটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, অভিযুক্ত ছাত্রদের নাম রফিকুল গাজি ও আশাদুল গাজি। এখানেই শেষ নয়। তাদের সঙ্গে নাকি যোগ দেয় দ্বাদশ শ্রেণির আরও দুই ছাত্র। তবে সংবাদপত্রের প্রতিবেদক কিন্তু দু’জনের নাম শেষ পর্যন্ত যোগাড় করে ওঠতে পারেননি। অরূপকে জখম অবস্থায় ক্যানিং হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রশ্ন ওঠে, খামকা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা জাতীয় সংগীতের সময় কেন ‘আল্লাহু আকবর’ (ঈশ্বরই শ্রেষ্ঠ) এই ধ্বনি দিতে গেল? আল্লাহ-র নাম জপ করার তো আরও অনেক সময়, স্থান-কাল-পাত্র এবং সুযোগ রয়েছে। তবে বিষয়টি কিন্তু অবশ্যই গুরুতর।
এই বিষয়ে ‘পুবের কলম’-এর তরফ থেকে অন্তর্তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের সাংবাদিক হাসিবুর রহমান কিন্তু ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি উপস্থিত হন ওই স্কুলটিতে। কথা বলেন স্কুল ও হিন্দু-মুসলিম স্থানীয়দের সঙ্গে।
প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার নস্কর বলেন, ‘এই খবর ও এ সম্পর্কিত প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই প্রচারণা আমাদের স্কুলকে বদনাম করার প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে। আমরা যে পত্রিকা ওই ভুয়ো খবর লিখেছে, তাদের কাছে স্কুলের প্যাডে এক প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছি। তাতে স্কুলের তরফ থেকে আমরা স্পষ্ট করে লিখেছি, ‘‘গত ১৮.০৭.২০১৯ দু’জন ছাত্রের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটলেও জাতীয় সংগীতের সময় ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক মিথ্যা বক্তব্য আমাদের বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চরম বিপদ ডেকে আনবে। এই খবরের প্রতি আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
স্কুলের ছাত্ররা বলে, এটি ছিল দু’জন ছাত্রের মধ্যে নেহাতই বচসার ঘটনা যা মারামারিতে পর্যবসিত হয়। টেলিফোনে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাছাকাছিই ছিলাম। এটা কোনও মতেই আল্লাহু আকবর কিংবা জয় শ্রীরামের ঘটনা নয়। তবে দু’জনের মারামারিতে নবম শ্রেণির ছাত্র অরূপ বেশি আহত হয়। তাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। কেন এই ধরনের মিথ্যা ও সাম্প্রদায়িক প্রচার করা হল, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
স্কুলের পাশেই থাকেন এমন এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম সকলে মিলেমিশে থাকি। স্কুলটি গরিব এই এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার আলো নিয়ে আসছে। এটা হয়তো অনেকেরই পছন্দ নয়। তাই তারা সম্প্রীতির বাংলায় সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে শুরু করেছেন। তবে স্থানীয় মানুষ তাদের চক্রান্ত ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।