চাঁচল ১ নং ব্লকের একসাথে দুটি পঞ্চায়েত অফিসে ভাঙচুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, নতুন গতি, চাঁচল: মালদহের চাঁচল ১ নং ব্লকের একসাথে দুটি পঞ্চায়েত অফিসে ভাঙচুর ও তালা ঝোলানোর ঘটনায় তুমুল উত্তেজনা। জানা যায়, বুধবার বিকেলে চাঁচল-১ ব্লকের মতিহারপুর ও কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে আমজনতারা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই ভাঙচুরের ঘটনা গুলো ঘটে বলে খবর। দুই পঞ্চায়েতেই বাসিন্দারা জুরুরী কাজে এসে পঞ্চায়েত প্রধানকে না পেয়ে চাঞ্চল‍্য সৃষ্টি হয় বলে খবর।

    চাঁচলের মতিহারপুর পঞ্চায়েত দপ্তরে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশনের কুপন নিতে এসে পঞ্চায়েত প্রধানকে না পেয়ে উত্তেজনা ছড়ায় বলে জানিয়েছে বাসিন্দাদের একাংশ। মঙ্গলবারের পর বুধবারও একই ঘটনার জেরে পঞ্চায়েত দফতরে ভাঙচুর চালান ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একাংশ। এমনকি দফতর থেকে সরকারি কর্মীদের বের করে দিয়ে প্রহরীর কাছ থেকে চাবি কেড়ে নিয়ে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

    পাশাপাশি কলিগ্রামে বাংলা আসাব যোজনার নথি জমা দিতে এসেছিলেন উপভোক্তারা। সেখানেও প্রধানকে না পেয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তারপরেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কলিগ্রামে দফতরে ভাঙচুর চালিয়ে নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ।

    তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগে গত সপ্তাহে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে কুপন বিলি বন্ধ হয়ে যায় মতিহারপুরে। মঙ্গলবার ফের কুপন বিলি করা হবে বলে শ্রমিকদের জানানো হয়। কিন্তু এদিনও প্রধানকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর শুরু করেন তারা।

    পঞ্চায়েতের প্রহরী মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মারতে উদ্যত হওয়ায় ভয়ে চাবি দিয়ে দিই। টানা চারঘন্টা পরে কোনো ক্রমে প্রশাসনের সহযোগীতায় পঞ্চায়েত ঝোলানো তালা খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মতিহার পুরের প্রধান পপি দাস।
    মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পপি দাস জানান, এদিন ব্লক অফিসে জরুরি মিটিং থাকায় পঞ্চায়েত দফতরে হাজির হতে পারিন। এক বৃদ্ধা ফরিদা বেওয়ার অভিযোগ, ছেলে ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরত হয়েছে। এখনও রেশনের কুপন পায়নি। প্রতিদিন ফিরে যেতে প্রধানের অনুপস্থিতিতে । কাজ হয়না। আমরা রেশ না পেলে খাবকি? গ্রামে ফিরে ছেলে কর্মহীন রয়েছে।

    আরো এক বাসিন্দা রাজেশ আলীর অভিযোগ, প্রধানের গর হাজিরে আজ এই ঘটনা। প্রধান থাকলে এমনটা হতো না।
    ভাঙচুরের ঘটনাটি ব্লক অফিসে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান পপি দাস। ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন চাঁচল ১ নং ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য্য।

    একই সময়ে কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বাংলা আবাস যোজনার নথিপত্র জমা করতে যান বেশ কিছু প্রকৃত উপভোক্তা। প্রধানের অনুপস্থিতে পঞ্চায়েত কর্মীদের সাথে বচসা ও শুরু হয় গন্ডগোল, ব‍্যাপক ভাঙচুর।

    কয়েকজন উপভোক্তা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মীরা নথি জমা নিতে নারাজ হয়। তারা বলেন, প্রধান এসেই জমা নেবেন সব। তারপরেই উত্তেজনা। ঘটনার জেরে দুজন উপভোক্তা সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং দূজন চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে খবর।

    কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল খানের দাবী নথি জমা না নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। চাঁচল ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সভাপতি ওবাইদুল্লা আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কিছু উপভোক্তা সহ পঞ্চায়েত দপ্তরে ভাঙচুর চালান।
    এবং পঞ্চায়েত দপ্তরের ইলেকট্রনিক যন্ত্রণাংশ, ফুলের টব,চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেছে উপভোক্তারা। এবং দুজন পঞ্চায়েত কর্মী নারায়ণ দাস ও লিটন সেখকেই মারধর উপপ্রধান অচিন দাসের আঙু কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ প্রধানের।

    এবিষয়ে চাঁচল ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ওবাইদুল্লাহ আহমেদ চৌধুরী হেসে বলেন, দপ্তরে কাজের চাপে গোটাদিন চেয়ার ত‍্যাগ করতে পারিনি। সেটা ব্লকে সকলেই জানেন। আর আমি কি না কি কলিগ্রামে গিয়ে ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিলাম। বিরোধী দলের হওয়ায় নিজেদের ভুল লুকোতে এসব হাস্যকর অভিযোগ তোলা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। চাঁচল-১ ব্লক সমস্টি উন্নয়ন আধিকারিক সমীরণ ভট্টাচার্য্য এদিন মালদায় জরুরী মিটিংয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছেন। দুটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও খোঁজ নিয়ে প্রধানদের সাথে আলোচনা করা হবে।