চিকিৎসার অভাবেই কি মরতে হবে শিশুকে? শিশুকে নিয়ে চিকিৎসার প্রতীক্ষায় মা

চিকিৎসার অভাবেই কি মরতে হবে শিশুকে? শিশুকে নিয়ে চিকিৎসার প্রতীক্ষায় মা

     

    মহম্মদ নাজিম আক্তার, মালদা,১৮ অক্টোবর: তার বয়সের অন্য বাচ্চারা যখন খেলে-দৌড়ে বেড়ায়, তখন বিছানা থেকে উঠে আকাশটাই দেখা হয় না তেরো মাসের শিশু তানিশা খাতুন এর। কারণ, তার শরীরের অর্ধেকের বেশি ওজন তার মাথার। যত দিন যাচ্ছে, মাথা আরও বড় হচ্ছে!

     

    মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ামারি গ্রামের শিশু তানিশা হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। জন্মের বেশ কয়েকদিন পর থেকে তানিশা এ রোগযন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভাবিষ্যতের দিকে। অথচ অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার।রাজ্য সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও কোথায় গেলে বিনামূল্যে চিকিৎসা মিলবে তা তারা জানেন না।

     

    হরিশ্চন্দ্রপুর গ্ৰামীন হাসপাতালের বি.এম.ও.এইচ এ.কে মন্ডল জানান, এই রোগে মস্তিষ্কে জল জমতে থাকে এবং তার চাপে মাথা ক্রমশ বড় হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যুও হয়। হাইড্রোসেফালাসের চিকিৎসা অবশ্যই হয়। তবে দেখতে হবে, রোগী কী অবস্থায় আছে। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারও হতে পারে। বিশেষ পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের জল পেটের মধ্যেও পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতির নাম ‘ভেনট্রিকিউলোপেরিফোনিয়াম’। এই পদ্ধতি সফল না হলে পরের ধাপ হচ্ছে ‘ইটিভি’। এই বিশেষ ধরনের অস্ত্রোপচারে মস্তিষ্কের কোনও একটি বিশেষ অংশে জমে থাকা জল সারা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে অথবা সেই জল বাইরেও বের করা যেতে পারে।

     

    তানিশার বাবা উজির হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। সংসার চালানোর জন্য তাকে কখনো ‌ভিন রাজ্যে কখনো আবার এলাকার ইঁট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে হয়।হরিশ্চন্দ্রপুরের কোয়ামারি গ্রামে রোডের ধারে একচিলতে টালির ছাউনির এক কামরার ঘরে বয়স্ক বাবা-মা,স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে কোনো রকমে থাকেন উজিরবাবু। বাস্তু ভিটে ছাড়া তাদের কোনো জমি নেই। পরিবারে নিত্য অভাব। বাড়িতে একজন মাত্র রোজগেরে। দিনমজুর করে যা অর্থ উপার্জন হয় তা দিয়ে পরিবার চালানো মুশকিল, চিকিৎসা তো দূরের কথা।

     

    উজিরবাবুর স্ত্রী রাজিয়া বিবি জানান, স্বাভাবিক ও সুস্থ ভাবেই শিশুটির জন্ম হয়েছিল। জন্মের বেশ কয়েকদিন পর মাথার পিছনে ছোট্ট একটা আব হয়। তারা তখন এই রোগ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।স্থানীয় ডাক্তারদের দেখালে তাঁরাও এই রোগ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। চার মাস পর শিশুটির মাথা বড় হতে থাকে। মাথার ওজন শরীরের ওজন থেকে বেশি হয়ে পড়ে। মাথার ভারে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। মাথার দুই পার্শ্বে একটি করে ঘা হয়ে গর্ত হয়েগেছে। সবসময় রক্ত মিশ্রিত জল নিঃসৃত হতে থাকে।ব্যথা-যন্ত্রায় ছটফট করে ও শুয়ে থাকে। চিকিৎসার জন্য হরিশ্চন্দ্রপুর গ্ৰামীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, এই রোগের প্রাথমিক কোনও চিকিৎসা নেই। অস্ত্রোপচার করে মাথায় জমে থাকা জল বার করতে হবে। চিকিৎসা দ্রুত না করলে শিশুটি বেশি দিন বাঁচবে না। এখনও সেই কথা বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন রাজিয়া বিবি। আঁচলে মুখ মুছে বলেন, ‘‘বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে আমাদের।’’

     

    তবে চিকিৎসা সম্ভব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন উজিরবাবু । লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য তার নেই। আর্থিক অভাবের কারণে কি মেয়েকে চোখের সামনে মরতে দেখতে হবে? শুনেছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়। তবে তার মেয়ের জন্য কি কোনও দরজা খোলা নেই?’’

    কোনো স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা বা সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার সুযোগ করে দিলে অকালে ঝরে পড়ার আগে প্রাণে বেঁচে যাবে তানিশা। এই অপেক্ষায় বসে রয়েছেন বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনেরা।

     

    এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মদক্ষ মর্জিনা খাতুন জানান আমি অবশ্যই ওই শিশুটির বাড়ি যাবো। অবিলম্বে যাতে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।