বিহার নির্বাচন প্রচারে রাম মন্দির কেই ইস্যু করলেন যোগী আদিত্যনাথ

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: প্রাক ভোট সমীক্ষায় যতই নীতিশ কুমারের জেডি (ইউ)-বিজেপি জোটকে এগিয়ে রাখা হোক না কেন, বিহার ভোটের ইস্যু নিয়ে এখনও দোলাচলে শাসক শিবির। আর এমন পরিস্থিতিতে বিহারে নির্বাচনের প্রচারে এসে রাম মন্দির ইস্যুকেই হাতিয়ার করলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদকে শেষ করেছিল। পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিদের মেরেছি।’ এমনকী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলেও নেওয়া হয়েছে।

    আর অবধারিতভাবে এরপরই এসে গিয়েছে রাম মন্দির ইস্যু। অদ্ভূত এক দাবি করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি বিজেপি প্রার্থীকে জেতান, আর সে যদি বিধায়ক হয়, তাহলে তিনিই আপনাদের রাম মন্দির দর্শন করতে নিয়ে যাবেন।’

    সেইসঙ্গে জোটের বিজেপি প্রার্থী নীতীশ কুমারের প্রশংসা করেও যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘নীতীশ কুমার বিহারে ক্ষমতায় আসার আগে বিহারের কী পরিস্থিতি ছিল, তা কারও অজানা নয়। এনডিএ সরকার শুধু বিহারের উন্নয়নের স্বার্থেই কাজ করে চলেছে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিহারে ফের সরকার গঠন হলে বিহারই লাভবান হবে। আমরা আসলে দেশের কথা বলি। আর বিরোধীরা ধর্মের কথা বলে। কারণে সন্ত্রাসবাদ ও মাওবাদীদের আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি।’

    অপরদিকে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল, বিজেপি ও জেডি(ইউ)-এর সঙ্গে এক জোটে না থাকলেও চিরাগ পাসোয়ানের দাবি, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুগত ‘হনুমান।’ অথচ সেই তিনি দ্বিতীয় প্রার্থিতালিকাতেও বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের টিকিট দিয়েছেন। এলজেপি-প্রধানের এই ‘কেন্দ্রে সখ্য-রাজ্যে প্রতিপক্ষ’ কৌশলে বিভ্রান্ত বিহারের বিজেপি কর্মীদের আশ্বস্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা প্রতিপক্ষ এবং সেই মতোই লড়ব।’ এ দিকে এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস-আরজেডি-বামদলগুলির ‘মহাগঠবন্ধন।’ তাদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের কটাক্ষ ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে তো বিহারকে বিশেষ মর্যাদা দেবেন না।’

     

    এ বারের নির্বাচনী ইস্তেহারে মূলত তিনটি বিষয়ে নজর দিয়েছে মহাগঠবন্ধন। এক, বিতর্কিত কৃষি বিল, দুই, ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি ও তিন, বিহারের বিশেষ মর্যাদা। এ দিন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, ‘আমরা সরকার গড়লে প্রথম বিধানসভা অধিবেশনেই বিল এনে ওই তিনটি কৃষি আইন বাতিল করব।’ অন্য দিকে, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে সরব হন তেজস্বী। বলেন, ‘নীতীশজি গত ১৫ বছর ধরে রাজ্যের শাসনক্ষমতায়। কিন্তু তার পরও বিশেষ মর্যাদা পেল না বিহার।’ এর পরই ট্রাম্পকে নিয়ে খোঁচা লালু-পুত্রের। রাজ্যের বেকারত্বের ছবি বদলে দেওয়ারও আশ্বাস দেন তেজস্বী। সঙ্গে দৃপ্ত ঘোষণা, ‘আমি-ই আসল বিহারী।’

     

    দ্বিতীয় প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পর চিরাগ-ও টুইটারে লেখেন, ‘আমরা জিতব এবং ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারি ফার্স্ট’ স্লোগানের বাস্তবায়ন করব।’ কিন্তু সে সঙ্গেই তাঁর দাবি, রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা যা-ই বলুন, তাতে মোদী ও গেরুয়া শিবিরের বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে তাঁর সমীকরণ মোটেও বদলাবে না। চিরাগের এই প্রচার দলীয় কর্মী-ভোটার তথা জোটশরিক জেডি(ইউ)-র মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, এই আশঙ্কায় বিহার বিজেপির ইন-চার্জ ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘এলজেপি আমাদের জোটের অংশ নয়।’ এক সাক্ষাৎকারে শাহেরও দাবি, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু বার চিরাগের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু দরকষাকষি ফলপ্রসূ হয়নি।’ একই সঙ্গে জানান, বিহারে দুই তৃতীয়াংশ আসন পাচ্ছে এনডিএ। এবং সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী হবেন নীতীশ কুমার। বিজেপি আলাদা করে জেডি(ইউ)-র থেকে বেশি আসন পেলেও এই সিদ্ধান্তের নড়নচড়ন হবে না।