|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা, নতুন গতি, কালিয়াচক: লকডাউনে ঘর বন্দি সবাই। বাইরে বেরিয়ে যে দুটো কথা বলবে তার জো ছিল না। ছিল না নতুন বন্ধু পাতানোর কোনো চেনা জানা মাধ্যম। তাই ফেসবুকেই ভরসা করেন কালিয়াচকের কয়েকজন। খুলে ফেলেন ফেসবুক গ্রুপ। গ্রুপের নাম দেন, ‘কালিয়াচকের লোক হামরা’। উদেশ্য ছিল আপামর কালিয়াচকের ইতিহাস, ঐতিজ্য, সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গীত, হারিয়ে যাওয়া খেলা ধুলো, শিল্প, সাহিত্য, চাষাবাদ ও রকমমারী জন জীবিকা নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতি রোমন্থন। সেই আলোচনা ও স্মৃতি রোমন্থনই যেন খুলে দিয়েছে এই গ্রুপের বিভিন্ন দিক। কালিয়াচকসহ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের ইতিবাচক সাড়ায় ভরে উঠেছে এই গ্রুপের নানান পোষ্ট। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা চার হাজার। কালিয়াচককের মত জায়গার ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে এমন উদ্যোগ আগে তেমন ভাবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হয়নি। তাই মানুষের উৎসাহে ঘাটতি দেখা যায় না।
অতি উৎসাহিত কিছু মানুষের আবেদন ও ভরপুর সহযোগিতায় কালিয়াচকের শহরের প্রাণকেন্দ্রে ‘কালিয়াচকের লোক হামরা’গ্রুপটি একটি বনভোজনের আয়োজন করে রবিবার (২০ ডিসেম্বরে)। বছরের শেষের আমেজে আর শীতের আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে বনভোজনে অংশ গ্রহন করে কলেজ পড়ুয়া, স্কুল শিক্ষক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের সমস্ত স্তরের সব মিলিয়ে একশোরও বেশি কালিয়াচকের বাসিন্দা। অখন্ড কালিয়াচক তিনটি ব্লক নিয়ে গঠিত। কালিয়াচক-১, কালিয়াচক-২ ও কালিয়াচক-৩। বৃহৎ এই ভূখন্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংস্কৃতি ও ভাষাগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এক সাথে মিলিত হন সকলে। কালিয়াচকে আঞ্চলিক জোলহা ভাষা, বাদিয়া ভাষা, চাঁই ভাষা ও খোট্টা ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের বসবাস। এদিনের এই বনভোজনে সকল ভাষার মানুষ তাদের নিজের নিজের আঞ্চলিক ভাষায় নিজেদের সমাজ সংস্কৃতির কথা তুলে ধরেন। বিশ্বায়নের আগ্রাসনে বাংলা ভাষার মত প্রতিষ্ঠিত ভাষা যেখানে কোন ঠাসা হয়ে উঠছে সেখানে আঞ্চলিক ভাষার এহেন চর্চাকে অনেকেই সম্ভাবনাময় হিসেবে মনে করছেন।
‘কালিয়াচকের লোক হামরা’র তরফে এ দিন উপস্থিত ছিলেন নাসিমুল মোমিম, নাসরিন বানু খান, নাসিমুল হক নাসিম, সালমান ইসলাম, জান্নাতুন ফিরদৌস, নাজেম মোমিন ও মোহাম্মদ ওয়াসিম আকরাম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদহের বিখ্যাত লোকগীতি শিল্পী চন্দ্রা ঝাঁ মিশ্র, কালিয়াচকের বিশিষ্ট সমাজসেবী ডাক্তার মনোয়ার হোসেন ও ব্যবসায়ী সোহেল আব্বাস সহ অনেকেই।