মনে আছে তো? শাহনওয়াজ খান কে

আসিফ আলম, নতুন গতি, বহরমপুর:

    বর্তমান লালকেল্লার শিয়রে উড়তে থাকা “তিরঙ্গা” দেশের গৌরবের প্রতীক।স্বাধীনতার আগে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পূর্বে ঐ স্থানে বৃটিশ পতাকা উড়তো। কিন্তু অবগত আছেন কি? ব্রিটিশ পতাকা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, সর্বপ্রথম ঐ লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন কোন ব্যক্তি ?

    বর্তমান ভারতে যাদের পাকিস্তানী, জঙ্গি অপবাদ লাগানো হচ্ছে, তিনি হলেন সেই মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তি। তিনি আর কেউ নন! তিনি হলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট জননেতা, আজাদ হিন্দের মেজর, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের নয়নমণি “জেনারেল শাহনওয়াজ খান।” ইনি ছিলেন বর্তমান জনপ্রিয় বলিউড বাদশা শাহরুখ খান এর দাদু। জন্ম – ২৪ জানুয়ারি ১৯১৪, আর মৃত্যু ৯ ডিসেম্বর ১৯৮৩।

    দেশের জন্য যারা নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন, জেনারেল শাহনওয়াজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি দারুণ বক্তৃতা দিতে পারতেন। লালকেল্লায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত “light and sound show”-তে নেতাজী-র সঙ্গে সঙ্গে, শাহনেওয়াজ খান এরও বক্তৃতা শোনা যেত।

    তিনি ছিলেন অবিভক্ত ভারতের বাসিন্দা, পার্টিশন এর সময়, পাকিস্তানে গোটা পরিবারকে ছেড়ে, একাই ভারতে চলে এসেছিলেন, পাকাপাকি ভাবে। কারণ তাঁর পরিবার চেয়েছিল পাকিস্তানে থাকতে, কিন্তু তিনি চাননি। স্বাধীনতার পরবর্তীতে উত্তর প্রদেশের “মেরঠ” থেকে নির্বাচনে চারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এবং প্রতিবারই জয়ী হন। এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় জায়গা করে নিয়েছিলেন।

    ১৯৬৫ সালের ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধ, শাহনওয়াজ খান এর কাছে এক মর্মান্তিক ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত। তিনি নিজে ছিলেন ভারতের মন্ত্রী অপরদিকে তাঁর পূত্র কর্নেল মেহমুদ আলী ছিলেন, পাকিস্তান সেনাদলের গুরুত্বপূর্ণ অফিসার। সেই সময় বেশকিছু অতি দেশভক্ত মানুষ, তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে, সম্পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন। মেহমুদ এই যুদ্ধে নিহত হন, এবং দেশভক্তির প্রমাণ হিসাবে নিজের সন্তানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তিনি পাকিস্তানে পর্যন্ত যাননি।

    তিনি বলেছিলেন, “দেশের শক্রু, আমার শক্রু, সেটা পূত্র হোক অথবা পিতা।”
    কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ এই মুসলিমদেরই ভারতে পাকিস্তানী বলা বাঁচতে হচ্ছে!