|
---|
জাকির হোসেন সেখ,৪ এপ্রিল, নতুন গতি: ‘পার্টি উইথ এ ডিফারেন্স। পার্টি উইথ অল প্লাইট’- এই আদর্শকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছিল বিজেপি। সাড়ে তিনদশক পর সেই আদর্শ কি আছে বিজেপির ? লোকসভা ভোটের মুখে এক বিখ্যাত ব্লগে ৫০৯ শব্দের এক বিস্ফোরক লেখনিতে মোদী-অমিতদের চুড়ান্ত অসস্তিতে ফেললেন লৌহমানব লালকৃষ্ণ আদবানি। হুঁশিয়ারি দিয়ে নরেন্দ্র মোদি- অমিত শাহদের মনে করালেন, মতের অমিল হলেই কাউকে শত্রু চিহ্নিত করাটা বিজেপির পরম্পরা নয়।
একসময়ের দাপুটে প্রবীণ নেতাকে এবারের ভোটে প্রার্থী পদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে দল৷ ৯১ বছর বয়সী এই লৌহপুরুষ বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই নীরব ছিলেন৷ অবশেষে আজ মৌনতা ভেঙে ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন ব্লগে।
মোদি জমানায় প্রথম থেকেই তিনি কোণঠাসা। প্রার্থী পদে নেই। ভোটেও নেই। প্রচারেও নেই। মার্গদর্শক যেন শুধুই দর্শক হয়ে ফুঁসছিলেন।
অন্যদিকে বেপরোয়া ভঙ্গিতে, পরিবর্তনের ধুয়ো তুলে
নিজস্ব স্টাইলে দল চালাচ্ছিলেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি। এই জুটির কাজকর্ম নিয়ে দলের অন্দরেই হাজারো অভিযোগ। মতের অমিল হলেই শত্রু হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া। কখনও দেশের শত্রু, আবার কখনো দলের। এই পরিস্থিতিতে ব্লগকে হাতিয়ার করলেন প্রবীণ নেতা আদবানি।
তিনি লিখেছেন,’‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কখনো শত্রু ভাবেনি বিজেপি ৷ দলের জন্মলগ্ন থেকে এমন মনোভাব কখনোই ছিল না বিজেপিতে৷ মতের অমিল হলেই শত্রু হিসাবে দেখা ঠিক নয়। বিজেপিতে কখনও এই পরম্পরা ছিল না। তেমনি জাতীয়তাবাদ নিয়ে আমাদের যা ধারণা, তার সঙ্গে অন্যদের মত নাও মিলতে পারে। বিজেপির জাতীয়তাবোধ পরমতসহিষ্ণু ৷ বিরোধী কথা বললেই কেউ দেশবিরোধী হয়না।”
পুলওয়ামা হামলা এবং বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইকের পরই জাতীয় রাজনীতিতে এখন নতুন প্রবণতা। প্রশ্ন করলেই পাকিস্তানপন্থী। উল্লেখ্য, মৃত জঙ্গির সংখ্যা জানতে চাওয়ায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধিকেও পাকিস্তানপন্থী বলে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি ৷
সাংবিধানিক সংস্থাগুলির ক্ষমতা কাড়ার অভিযোগও উঠেছে নরেন্দ্র মোদিদের বিরুদ্ধে। আদবানির ব্লগে তা নিয়েও বার্তা এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে তিনি লিখেছেন, “বিজেপি বরাবর সংবাদমাধ্যম সহ গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলির স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ পরিচালন নীতির পক্ষে। এইজন্যই আমরা ভোটে ইলেকট্ররাল বন্ডের দাবি তুলেছিলাম।”
তিনি আরও লিখেছেন, “সত্য, ন্যায়নীতি ও গণতন্ত্র – এই তিনটিই হল বিজেপির মূলমন্ত্র। আমার আশা, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে আমরা একইভাবে চেষ্টা করে যাব। ভোট হল গণতন্ত্রের উদযাপন। সবাই এতে অংশ নিলেই এর সাফল্য সম্ভব।”
দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভিয়েনায় রাষ্ট্রসংঘের সভায় যেমন অটলবিহারী বাজপেয়ীকে পাঠিয়েছিলেন। খোদ আদবানিকে তেমনি পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আবার ঘোর সমালোচক সিপিএম নেতা হরকিষেণ সিং সুরজিতের শেষকৃত্যেও দিনভর ছিলেন আদবানি। এমনই হাজারো দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় রাজনীতিতে। মোদি সরকারের আমলে সেই পরম্পরা যে ভেঙে খান খান হচ্ছে – এই বার্তাটাই যেন উঠে এলো লৌহপুরুষের বক্তব্যে৷ ভোটের আগে বিজেপির একসময়ের পোস্টার নেতার এমন বিস্ফোরক উক্তিতে চরম অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির ৷
আডবানীর দীর্ঘদিনের নির্বাচনী কেন্দ্র গান্ধিনগর থেকে ২০১৯ সালের এই নির্বাচনে লড়ছেন বর্তমান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ৷ সৌজন্যতা দেখিয়ে ভোটে না দাঁড়ানোর কথাও নাকি আদবানিকে জানাননি মোদি ও অমিত শাহ। প্রার্থীপদ না পাওয়ার যন্ত্রণার থেকেও ব্লগের প্রতি ছত্রে ফুটে উঠেছে দলের বর্তমান সদস্যদের প্রতি অভিমান ৷ দলের ভিতরের গণতন্ত্র নিয়ে হতাশা ৷ প্রার্থী পদ না পাওয়ার ক্ষোভেই যে এই বিস্ফোরণ, সেটাও বলার সুযোগ পাচ্ছেন না মোদিপন্থীরা। কারণ বিজেপির আদর্শ আর গঠনতন্ত্র ধরে রাখার পক্ষেই বলেছেন দলের লৌহপুরুষ।