|
---|
শুভদীপ পতি; হলদিয়া: ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ই মার্চ। হঠাৎই আগুন ধরে গিয়েছিল খড়ের গাদায়। এরপর আগুন লাগে বাড়ির শয়নকক্ষে। এর ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সুতাহাটা থানা অন্তর্গত গুয়াবেড়্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের টাবাখালি গ্রামের বাগ পরিবার।
দু-একদিন ছাড়াই বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় সুতাহাটা থানায় ডায়েরিও জমা পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে, কিন্তু কোনও কিনারা হয়নি। হবেই বা কীভাবে, যেখানে গৃহস্থের সবার দাবি, তাঁরা কেউই এই ঘটনায় জড়িত নয়। এমনকি, তাঁরা কেউই বাইরের কাউকে বাড়ির মধ্যে আসতে দেখেননি। উল্লেখযোগ্য ভাবে আগুন ধরছে কখনও সন্ধ্যায়, কখনও দুপুরে কখনও বা সাত সকালে।
শেষমেশ খবর পৌঁছায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিদের কাছে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে তৎপর হয় বিজ্ঞান মঞ্চের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সহ-সম্পাদক নকুল চন্দ্র ঘাঁটী। তিনি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গঠন করেন এবং গত ৩১শে মার্চ পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে।
এরপর বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধি দল পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেয় কাউন্সিলিং করার। যথারীতি পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে শুরু হয় কাউন্সিলিং এবং সিআইডি ধাঁচে আগুন লাগার সমস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করে। যথারীতি গতকালকেও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে কাউন্সিলিং।
পরিবারের সকল সদস্যের একে একে কাউন্সিলিং করতে থাকায় উঠে আসে এক নতুন মোড়। বেশ কিছুদিন থেকে পার্শ্ববর্তী একটি জায়গা কেনা নিয়ে ছিল পারিবারিক জটিলতা। আর সেই জায়গা রেজিস্ট্রির পরের দিন থেকেই চলছে অগ্নি সংযোগের ঘটনা।
কে ধরিয়ে দিচ্ছে এই আগুন? বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধি দলের সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে আগুন লাগার ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে বেশ কিছু পোড়া – ভাঙা দেশলাই কাঁঠি। এমনকি বাড়ির এক সদস্যের দাবি, আগুন লাগার সময় তিনি কেমিক্যাল / কেরোসিন জাতীয় গন্ধ পেয়েছিলেন। প্রতিনিধি দল একটা ব্যপারে স্পষ্ট হতে পেরেছেন, যা পরিবারের কেউ এই অগ্নি সংযোগ ঘটাচ্ছেন।
পরিবারের আরও এক সদস্যের দাবি, প্রতিবেশী এক যুবক এই ঘটনার মাঝে একদিন রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ঢোকার মুখে বাইক থামিয়ে ৪০ (চল্লিশ) ফুট ভূত দেখেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। এহেন ঘটনার বিবরণে বিজ্ঞান মঞ্চের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সর্বশেষে আবারও নিশ্চিত হয়ে পড়ে যে, এই ঘটনায় প্রতিবেশী কোনো ব্যক্তির সাথে বাগ পরিবারের কোনো এক সদস্য পরিকল্পনা মাফিক ঘটিয়ে চলেছে এমনই ঘটনা। যা বাগ পরিবার তথা এলাকাবাসীদের কপালে গভীর ভাঁজ এনে দিয়েছে।
পরিবারের গৃহকর্তী বলেন, এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন, সত্য ঘটনা তিনি জানতে চান। জায়গা সংক্রান্ত জটিলতা থেকেই এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁর গভীর অনুমান।
বিজ্ঞান মঞ্চের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সহ-সম্পাদক নকুল চন্দ্র ঘাঁটি বলেন, এই পৃথিবীতে ভূত বলে কিছুই নেই। মানুষের দ্বারাই এইসব ঘটনা ঘটছে। তবে তিনি খুব শীঘ্রই এই রহস্যের উদঘাটন করতে পারবেন বলেই আশাবাদী।