|
---|
জাকির হোসেন সেখ, ১৭ জুন, নতুন গতি, কলকাতা: ১২ বছর কারাবাসের পর কেরালা হাইকোর্ট ৫ নিরাপরাধ মুসলিম যুবককে বেকসুর বলে মুক্তি দেয়ায় আবারও সত্যি বলে প্রমাণ হল, “বেশিরভাগ নিরিহ মুসলিম যুবকদের মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে দেয়ার তত্ত্ব।”
কয়েকদিন আগে কেরালা হাইকোর্ট এমনই ৫জন নিরীহ মুসলিম যুবককে নির্দোষ বলে রায় দিল, শুধুমাত্র গোপন বৈঠক করার কারণে যাদের ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে ২০০৬ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং এনআইএ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া নামের তৎকালীন এক ছাত্র সংগঠনের সদস্য বলে পরিচিত ৫জন ঐ অভিযুক্তর মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় অভিযুক্তকে এনআইএ আদালত ১৪ বছরের কঠোর কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিল। বাকি ৩জন অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বিভিন্ন ধারায় ১২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। এমনকি পাঁচ অভিযুক্তদের ওপর ১২৪/এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহ সহ বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে Unlawful Activities (Prevention) Act
(UAPA) ও প্রয়োগ করা হয়েছিল।
এনআইএ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তদের পরিবার ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে কেরালা হাইকোর্টের
বিচারপতি এ এম শাফিক ও অশোক মেননের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মোকদ্দমা দায়ের করলে
তা গৃহীত হয়।
আসামিরা সন্ত্রাসী বক্তৃতায় লিপ্ত ছিল, আসামিরা দেশদ্রোহিতায় যুক্ত ছিল এবং আসামীদের গোপন বৈঠকে ভারত-বিরোধী উপকরণ বিতরণের উদ্যেশ্য ছিল বলে মারাত্মক অভিযোগে এনআইএ আদালতের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তিদান করার পক্ষে সমস্ত রকম প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ার পর পাঁচজনকে বেকসুর খালাস করে দেয় কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য যে, ২০০৬ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেরালার এরনাকুলামের পানায়িককুলামের হ্যাপি অডিটোরিয়ামে মুসলমান যুবকদের একটি দল ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানটি জনসমক্ষেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং সংগঠকরা ঘটনাটির সাথে সম্পর্কিত লিফলেটও বিতরণ করেছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন পুলিশ আচমকা হানা দেয় এবং ১৮ জনকে গ্রেফতার করে।
মামলায় ১১ জনকে বেকসুর খালাস করে দেয়। দোষী সাব্যস্তে দন্ড প্রাপ্ত হওয়া ১) পি এ শাদুলী, ২) আবদুল রাশিক, ৩) আনসার নাদভি, ৪) নিজামুদ্দিন এবং ৫) শাম্মী নামের পাঁচ অভিযুক্তদেরকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায় যে, এনআইএ আদালত একজন মাত্র ব্যক্তির (সাক্ষীর) বিবৃতির ভিত্তিতেই ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। যাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি।
বেঞ্চ আরো বলেছে, এনআইএ বিশেষ আদালত অভিযুক্তদেরকে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে গুরুতর ভুল করেছিল।