কারাগারে দোষী সাব্যস্ত ও বিচারাদিন বন্দিদের মধ্যে মুসলিমদের হার দ্বিগুণের বেশি ক্ষোভ আইমার সভায়

জাকির হোসেন মোল্লা : দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার ব্লকের লক্ষীকান্তপুর বিজয়গঞ্জ বাজারে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো অল ইন্ডিয়া মাইনোরিটি অ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশ। উপস্থিত ছিলেন আইমার কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা জনাব মার্জিন হোসেন, রাজ্য নেতৃত্ব সেলিম শেখ, আফতাব হোসেন, জেলা পর্যবেক্ষণ হাফিজুল খান, জেলা নেতৃত্ব জুম্মান আলী জাফরী, সেলিম যাদব, জনাব মাওলানা আলমগীর, জনাব জিয়াউর রহমান, রহিমি কাজী, রহমাতুল্লাহ মাজাহেরী, হাফেজ নাঈম উদ্দিন এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দাদপুর গুঞ্জরপুর সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক ও সাংবাদিক জনাব জাকির হোসেন মোল্লা।

    তিনি এই সমাবেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরকারের মনোভাবাপন্ন ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে মুসলিম ১৪.২% কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রিজোনার্স স্টাটিক্স অফ ইন্ডিয়া রিপোর্ট অনুসারে জানা যাচ্ছে সারা দেশের মধ্যে ২০১১ সালে কারাগারে বন্দিদের মধ্যে মুসলিমদের হার ৩০% এরও বেশি অর্থাৎ দেশের মুসলিমদের জনসংখ্যার হারের দ্বিগুণ হার কারাগারে অবস্থান করছেন মুসলিমরা। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ২০২১ সালের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চার ধরনের বন্দী রয়েছে। তারা হলেন দোষী সাব্যস্ত। বিচারাধীন বন্দি। ডিটে নিউস।

    আসামে হিন্দু জনসংখ্যা ৬১ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা ৩৪ শতাংশ কারাগারে দোষী সাব্যস্ত হিন্দু ৬৭ শতাংশ মুসলিম ৬১ শতাংশ কারাগারে বিচারাধীন বন্দীর হার হিন্দু ৪৭ শতাংশ মুসলিম ৪৯ শতাংশ গুজরাটে ৮৯ শতাংশ হিন্দু ১০ শতাংশ মুসলিম সেখানে কারাগারে দোষী সাব্যস্ত বন্দীর হার হিন্দু ৮০ শতাংশ মুসলিম কুড়ি শতাংশ কারাগারে বিচারাধীন বন্দীর হার হিন্দু আশি শতাংশ মুসলিম কুড়ি শতাংশ।

    পশ্চিমবঙ্গে জন সংখ্যার হার হিন্দু ৭১ শতাংশ মুসলিম ২৭ শতাংশ কারাগারে দোষী সাব্যস্ত বন্ধীর হার হিন্দু ৬৭ শতাংশ মুসলিম ৩২ শতাংশ কারাগারে বিচারাধীন বন্দীর হার হিন্দু সাতান্ন শতাংশ মুসলিম ৪৩ শতাংশ কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘু ততা মুসলিমদের বিভিন্ন কারণে ঠিকঠাক এবং সময়মত আইনি লড়াই না করতে পেরে তারা বছরের পর বছর জেল খেটে যাচ্ছে। পরিশেষে নির্দোষ হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু তখন তার পূর্বে বছর পর বছর জেলের মধ্যে আবদ্ধ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ টাই মাটি হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এই সংগঠন আইনি পরিসেবাবে কিভাবে দিতে হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
    আইমার রাজ্য নেতৃত্ব আফতাব হোসেন বলেন রাজ্যের ক্ষমতা তৃণমূল কংগ্রেসের হাতেই রয়েছে ২০১৬ সালের পরেও ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার তৈরি করে এখন প্রধান বিরোধীদল বিজেপি, বিজেপি আরএসএস কে এই রাজ্যে দাঁড়াবার মতো পরিবেশ করে দিচ্ছে তৃণমূল। এই দুই শক্তি এক দিকে তৃণমূল সমস্ত বিরোধী পরিসরকে গলা টিপে খুন করে রাজ্যের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।

    আইমার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মারজান হোসেন বলেন, বিজেপি সম্প্রদায়িকতা ও জাতপাতের রাজনীতির মাধ্যমে মানুষকে বিভেদ সৃষ্টি করছে। দেশজুড়ে চলছে চরম মেরুকরণের রাজনীতি। একদিকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ অন্যদিকে রাজনৈতিক মেরুকরণ। চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিস্ট সুলভ মানসিকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতায় এসে দেশকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু হয়ে দেশের বাজারকে উন্মুক্ত করে লগ্নিপুজীর ধারক বাহক কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষায় ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। দেশের প্রায় সত্তর শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল মানুষের উপর নেমে এসেছে বিরাট সংকট একদিকে বীজ সার বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আর অন্যদিকে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এক সংকট তীব্রতর হয়েছে এই প্রশ্নের গঠিত স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকার কার্যকর করছে না। উপরন্ত তিনটি কৃষি বিলের মাধ্যমে কৃষক শোষণের পথ সুগম করা হয়েছে। ৫০০টির বেশি কৃষক সংগঠন লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে সরকারকে সেই বিল বাতিল করতে বাধ্য করেছে। সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ে যেতে পারলে রাষ্ট্রশক্তিকে পরাস্ত করা যায়, লড়াইয়ের এই নতুন দিগন্ত আগামী দিনে নিশ্চিতভাবে সংগ্রামী মানুষকে নতুন শক্তি যোগাবে। আমার জেলা নেতৃত্ব জুম্মান আলি জাফরী বলেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ও জীবন দায়ী ওষুধের মূল্য বেড়েই চলেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে কর্মসংস্থান। ঠিকা প্রথাই চুক্তিভিত্তিক কাজ যেখানে ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা কাজের সময় কোন কিছুই নেই এই বিবরণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।নয়া শ্রম আইন এই কারণে পাশ করা হয়েছে। দেশের মেরুদন্ড রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংক বীমা রেলকে ধাপে ধাপে বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রায়ত্তের সংস্থাগুলিকে বন্ধ করে তা বিক্রি করে দেওয়ার নীতি গৃহীত হয়েছে।

    আজকের সভার আহব্বায়ক ও আয়মার জেলা কর্ণধর জনাব মাওলানা জিয়াউর রহমান রহিমি বলেন বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ। নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ লাগু হয়েছে এর মাধ্যমে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গঠিত হচ্ছে এবং আমাদেরকে এই আন্দোলন তীব্র রূপে গড়ে তুলতে আয়মার জেলা নেতৃত্ব ও ইমাম নেতা জনাব আলমগীর সাহেব বলেন তিনি আরো বলেন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে কোটি কোটি টাকার ওয়াক সম্পত্তি আত্মসাৎ হচ্ছে তার ভারতবর্ষে কত ওয়াকাপ সম্পত্তি আছে তার পরিসংখ্যান অবিলম্বে দিতে হবে এবং উক্ত টাকা থেকে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের দশ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন দিতে হবে।
    জেলা নেতৃত্ব সেলিম যাদব ওরফে পাপ্পু যাদব বলেন সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।