নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মাদক ব্যবসা আটকানোর ক্ষেত্রে বড়োসড়ো সাফল্য মিলবে বলেই ধারণা জেলা পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক : জেলা জুড়ে নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মাদক ব্যবসা আটকানোর ক্ষেত্রে বড়োসড়ো সাফল্য মিলবে বলেই ধারণা জেলা পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের। উল্লেখ্য, মালদহের কালিয়াচকের বিভিন্ন এলাকা এক সময় গ্যাং-ওয়ারের জন্য কুখ্যাত ছিল। পাশাপাশি, জাল নোটের কারবার এবং বেআইনি অস্ত্র কারখানা ঘুম কেড়ে ছিল স্থানীয় বাসিন্দা থেকে জেলা পুলিসের আধিকারিকদের। তবে গত তিন বছরে কালিয়াচক জুড়ে চলতে থাকা লাগাতার পুলিসি অভিযানে যথেষ্ট সাফল্য মেলে। গ্রেপ্তার করা হয় একের পর এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের। কমে আসে গ্যাং-ওয়ারের সংখ্যা। খুনোখুনির সংখ্যাও কমে যায় লক্ষণীয়ভাবে। জালনোটের কারবারও অনেকটাই মাত্রা হারায়।
কিন্তু সম্প্রতি পুলিসের নজরে এসেছে অন্য মোড় নিচ্ছে কালিয়াচকের দুষ্কৃতী কারবার। বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাচারের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দক্ষিণ মালদহের এই গুরুত্বপূর্ণ থানা এলাকা।
গত পাচঁ মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে কালিয়াচক থেকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের ৮ এপ্রিল ইংলিশবাজার থানার অধীনস্থ গৌড় মালদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ১.৬২ কিলোগ্রাম ব্রাউন সুগার। গ্রেপ্তার করা হয় একজনকে। এরপরে ১৯ মে পুলিস গ্রেপ্তার করে দুই মাদক পাচারকারীকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪৩ গ্রাম ব্রাউন সুগার। জুন মাসের ১৭ তারিখে ফের কালিয়াচকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে ৫৭৮ গ্রাম ব্রাউন সুগার এবং প্রায় দুই কিলো ৮০০ গ্রাম আফিমের আঠা। এ বছরের ১৭ আগস্ট সিআইডি’র একটি দল চালিয়ে কালিয়াচক থেকে উদ্ধার করে প্রায় এক কিলোগ্রাম ব্রাউন সুগার। গ্রেপ্তার করা হয় দুই জনকে। সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে কালিয়াচকের জালুয়াবাথাল এলাকার এক বাসিন্দাকে ২২৫ গ্রাম ব্রাউন সুগার সহ গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু এখানেই শেষ নয়। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইংলিশবাজার থানার সুসতানি মোড় এলাকা থেকে একটি ট্রাককে আটক করে উদ্ধার হয় প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কালিয়াচক থানার মোজামপুর এলাকায় মাদক ব্যবসার উদ্দেশ্যে। মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার বাসিন্দা দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।
মালদহ জেলার বিভিন্ন অংশে বিশেষত কালিয়াচক সংলগ্ন এলাকায় মাদক পাচার চক্রের এই রমরমা নজর এড়ায়নি জেলা পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মাদক পাচার রুখতে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পুলিস প্রশাসন।
মঙ্গলবার, কালিয়াচক থানার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট সভা করে মাদক ব্যবহারের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে মাদক পাচারের মতো অপরাধর আটকাতে স্থানীয় নাগরিকদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান পুলিস সুপার অলক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, পুলিস পুলিসের কাজ করছে। তবে এই মাদক পাচারকারীদের বিস্তৃত জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে গেলে সক্রিয় হতে হবে সাধারণ নাগরিকদের
পুলিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাচার বিরোধী পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়। ওই পোস্টারগুলিতে নির্দিষ্ট দুটি ফোন নাম্বারের উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ফোন নাম্বারের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে হোয়াটসঅ্যাপ বা ভিডিও তুলে মাদক পাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পুলিসকে জানানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে নাগরিকদের কাছে। এই আবেদনের যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন জেলা পুলিসের শীর্ষ কর্তারা।
পুলিস সুপার বলেন, কয়েক মাসে মাদক পাচারের ব্যাপক প্রবনতার দিকটি আমাদের নজরে এসেছে। তাই আমরা এই বিষয়টি রুখতে সরাসরি জনসংযোগ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। কালিয়াচক দিয়েই জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামীতে মালদহের অন্যান্য ব্লকেও এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে। এছাড়াও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে মাদক বিরোধী ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।