|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: ভারতের অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী নিযোগের কথা আগেই বলেছিলেন শীর্ষ আদালত। এ বার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তিন সদস্যের প্যানেল তৈরি করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রাক্তন বিচারপতি ইব্রাহিম খলিফুল্লার নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন ধর্মগুরু রবিশঙ্কর এবং আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু। চার সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। গতকাল শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত ৬০ বছরের পুরনো মামলার নিষ্পত্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তুতি নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বুধবারই রঞ্জন গগৈয়ের সাংবিধানিক বেঞ্চ বলে, এই মামলাটির মূল ভিত্তি সম্পত্তি নয়। বরং, মধ্যস্থতাই শান্তি বজায় রাখার একমাত্র উপায়। ফৈজাবাদে এই মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া চলবে। গোপনীয়তা বজায় রেখে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। মধ্যস্থতা চলাকালীন এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না সংবাদমাধ্যমে।
বুধবারের শুনানির পর উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং ‘রাম লালা’ কমিটি মধ্যস্থতার ব্যাপারে স্পষ্ট অনিচ্ছা প্রকাশ করে। অন্য দিকে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, যারা মধ্যস্থতার ব্যাপারে তুলনায় আগ্রহী, তারা আলাপ আলোচনার সময়ে গোপনীয়তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। হিন্দুদের মধ্যে নির্মোহী আখড়া রাজি থাকলেও হিন্দু মহাসভা এর বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েছে, এটা শুধু মামলাকারী দু’পক্ষের বিষয় নয়। দুই সম্প্রদায়ের সমস্যা। আমজনতা এই মধ্যস্থতা মানবে না।
রামলালার আইনজীবী বলেছিলেন, ‘রামের জন্মস্থানেই মন্দির তৈরি করতে হবে। রাম যে অযোধ্যাতেই জন্ম নিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। বিবাদ হল, সেই জন্মস্থান ঠিক কোথায়? রামের জন্মস্থান নিয়ে কোনও মধ্যস্থতা হতে পারে না।’
এর পর এক সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া শুরু করতে গতকাল নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। ‘চূড়ান্ত গোপনীয়তা’-র মধ্যে মধ্যস্থতা পর্ব সম্পন্ন করতে হবে, এমনই নির্দেশ শীর্ষ আদালতের। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে কাজের অগ্রগতির প্রথম রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে গোটা মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এ এস বোদড়ে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস এ নাজির। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ বিচারপতি এ এস বোদড়ের পর্যবেক্ষণ, এটি শুধু ১৫০০ বর্গফুট জমি সংক্রান্ত সমস্যা নয়। বরং রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা ভাবাবেগ এবং বিশ্বাসের। এর প্রেক্ষিতেই সব পক্ষকেই মধ্যস্থতাকারীদের নাম প্রস্তাব করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে মধ্যস্থতাকারীদের নাম এ দিন চ‚ড়ান্ত করেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তবে এই মধ্যস্থতার সময়কালে সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত কোনও খবর প্রকাশ করা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।উল্লেখ্য, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধূলিসাৎ হয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। আরএসএস ও বিজেপি একযোগে সেই আন্দোলন শুরু করেছিল। লালকৃষ্ণ আদভানি গোটা দেশে ‘রথযাত্রা’ বের করেছিলেন। মসজিদ ভেঙে মন্দির তৈরির আন্দোলনে প্রাণ গেছে বহু মানুষের। বিজেপি ও আরএসএস চায় অযোধ্যায় সাধারণ নির্বাচনের আগে রামমন্দির গড়ার কাজে হাত দিতে। কিন্তু তার আগে জমির মালিকানা চ‚ড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের বিবেচ্য সেটাই। ভোটের আগে সুপ্রিম কোর্টের রায় না এলে প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স জারির কথা ভাবা হচ্ছে।