বীরভূমের প্রাচীন ঐতিহাসিক কেন্দ্র রাজনগরের বেড়া পরব এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

মহঃ সফিউল আলম, নতুনগতি, রাজনগর: বীরভূম জেলার অন্যতম এক প্রাচীন ঐতিহাসিক কেন্দ্র হল রাজনগর৷ ঝাড়খন্ড সীমান্ত সংলগ্ন এই এলাকা৷ বহু রাজা রাজত্ব করেছেন একদা বীরভূমের প্রাচীন রাজধানী এই রাজনগরে৷ সেন বংশের রাজা, উড়িষ্যার রাজা নরসিংহ দেব, রাজা বীরচন্দ্র বা বীর রাজা যেমন এখানে একসময় রাজকার্য পরিচালনা করেন ঠিক তেমনি আফগান পাঠান বংশের প্রতিনিধিরাও এখানে রাজত্ব করেন৷ মুসলিম রাজাদের সময়ে এলাকায় বেড়া পরবের প্রচলন হয়৷ এমনটাই মনে করেন ঐতিহাসিক থেকে স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকবৃন্দ সকলে৷ সেই ধারাবাহিকতা আজও বজায় রয়েছে রাজনগর সহ বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি অন্যত্র৷ ভাদ্র মাস জুড়ে এই পরব পালন করা হয় প্রতি বছর নিয়ম করেই৷

    ফলে ব্যতিক্রম হচ্ছেনা এবারও৷ ভাদ্রমাসে বেড়া পরব পালন করেন বাসিন্দারা৷ সেই কারণে কিছুদিন আগে থেকে এবং ভাদ্র মাসেও বেড়া তৈরির কাজে উঠে পড়ে লাগেন স্থানীয় বেড়া শিল্পীরা৷ রাজনগরে মালাকার পদবির শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় এগুলি তৈরি করেন৷ বাঁশের কাঠি, নারকল কাঠি, শোলা, থার্মোকল, রঙীন কাগজ, আঠা প্রভৃতি সহযোগে বেড়ার কাঠামো তৈরি করা হয়৷ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মুসলিম পরিবারের সদস্যরা যাঁরা আজও এই পরব পালন করেন নিষ্ঠা সহকারে তাঁরা এগুলি কিনে নিয়ে যান৷ জানা গিয়েছে, জলের পীরকে তুষ্ট করার লক্ষ্যে এবং পুকুর, নদী বা জলাশয়ে শিশু, কিশোরদের কোনো রকম যাতে বিপদ বা জলে ডুবে মৃত্যু না হয় তার জন্য প্রাচীন রীতি ও বিশ্বাসের উপর ভর করে তাঁদের এই উৎসব পালন৷ বেড়ার ভেতরে সিন্নি , প্রদীপ রেখে তা ভাসিয়ে দেওয়া হয় পুকুর, ডোবা কিম্বা নিকটবর্তী কোনো জলাশয়ে৷ এই উপলক্ষে বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের খাবার পায়েস হালুয়াও তৈরি করেন অনেকে৷ বাড়ির মহিলারাও ব্যস্ত থাকেন পরব চলাকালীন এই সময়ে৷ ভাদ্র মাস এর শেষ সপ্তাহে এই উৎসবের ধুম একটু বেশি চোখে পড়ে৷ মুর্শিদাবাদের নবাবদের আমলে চালু হওয়া বেড়া পরবের সঙ্গে রাজনগর তথা বীরভূমের এই পরবের মিল অনেকটা খুঁজে পান আম জনতা৷ আজও সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে৷