অঙ্কে শীর্ষে কুরআনে হাফিজ সিরাজুল হক

নতুন গতি: এ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অঙ্কে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হলেন কুরআন হাফিজ সিরাজুল হক। বীরভূমের মুরারই থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম কাসিমনগর থেকে উঠে এসে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন সিরাজুল। একইসঙ্গে ৩০ পারা কুরআনে হাফিজ ( সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ মুখস্তকারী ) ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যাবিদ্যালয় থেকে এমএসসি ( অঙ্ক ) – তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। তা কিন্তু করে দেখালেন সিরাজুল। সিএসআইআর ইউজিসি নেট – এ জুনিয়র রিসার্চ ফেলাে হাফিজ সিরাজুল বর্তমানে বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ‘অ্যালজেবরা’ নিয়ে পিএইচডি করছেন। সিরাজুলের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় গ্রামেরই মাদ্রাসায়। সেখানে চতুর্থ – পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত্র পড়ার পর হাফিজের তালিম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাফিজ হওয়ার লক্ষ্যে যান উত্তরপ্রদেশে। মাদ্রাসা দারুল উলুম থেকে হাফিজের শিরােপা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু দাদা শফিকুল যেহেতু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন, তাই সিরাজুলের ইচ্ছা জাগে এবার তাকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে। ভর্তি হন ইতিহাসবিদ গোলাম আহমদ মোর্তজার প্রতিষ্ঠিত মেমারির মামুন ন্যাশনাল স্কুলে। স্কুলের সম্পাদক কাজী মুহাম্মাদ ইয়াসিন বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়ার ব্যবস্থা করেন। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও ইয়াসিন সাহেব অভয় দেন এগিয়ে চলাে। সেখান থেকে মাধ্যমিকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন সিরাজুল। সৰ বিষয়ে লেটার সহ তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫১l

    এরপর উচ্চমাধ্যমিকের পালা। কলকাতায় জিডি অ্যাকাডেমিতে থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশােনা সিরাজুলের। হতাশ করেননি। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয়ে ৪৪৪ নম্বর পেয়ে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। অঙ্কে অনার্স। তাতে কী ! রােজ সকালে ফযরের নামাযের পর কুরআন তেলাওয়াতের পর শুরু পড়াশােনা। এভাবে অঙ্কে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হন । তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে অঙ্কে এমএসসিতে ভর্তি হন। এমএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সিরাজুলের মনে হয়েছিল ভালাে রেজাল্ট হবে। কিন্তু তার আগে অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সিরাজুল সিএসআইআর – ইউিজিসি – নেট প্রবেশিকায় বসা। সেখানে সিরাজুল জুনিয়র রিসার্চ ফেলাে হিসেবে উত্তীর্ণ হন। তখন রেজাল্ট বের না হলেও গবেষণার জন্য মনস্থির করে ফেলেন সিরাজুল। রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে আবেদন জানালে তার মেধার তারিফ করে ভর্তি করে নেওয়া হয়। মার্কশিট হাতে পাওয়ার পর তা জমা দেওয়ায় ভর্তি নিশ্চিত হয়। সেখানেই অ্যালজেবরা ‘ নিয়ে পিএইচডি করছেন সিরাজুল। আর স্বপ্ন দেখছেন ভবিষ্যতে অধ্যাপক হওয়ার। যুব সমাজকে পথ দেখাতে চান, বুঝিয়ে দিতে চান ধর্মীয় শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন — কুরআনের হাফিজ হলেও গবেষক – অধ্যাপক হাতে কোনও বাধা নেই।