গরমের কষ্ট থেকে শিক্ষা নিয়ে জল সঞ্চয় ও বৃক্ষরোপণে জোড় দিতে হবে

ইয়াসমিন খাতুন: গত বছরে আমরা যে তীব্র দাবাদহে জ্বলে পুরছিলাম সেকথা কি ভুলে গেলাম? তীব্র দহন জ্বালায় সাময়িক স্বস্তির খোঁজে কেউ এসি ব্যাবহার করেছি আবার কেউ হয় গাছ তলায় নয় বাড়ীর ছাদে জল ঢেলে, খড় – থার্মোকল বিছিয়ে কৃত্রিম ভাবে ঠান্ডা রেখে ঠান্ডায় থাকার চেষ্টা করেছি। তার কয়েক মাসের ব্যাবধানে প্রচন্ড গরম থেকে আরামদায়ক পরিবেশ সবটাই উপলব্ধী করছি আমরা। কিন্তু এসবও তো সাময়িক। আমরা ভুলে যাচ্ছি গরমের কষ্টের কথা। ভাবছি না যে, বিগত বছর যা হলো তা আগামী বছর ফের এই তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে হবে না তো? নাকি অতি তাপপ্রবাহে কষ্ট আরো বাড়বে।

    কথায় আছে সুযোগের সদ্বব্যাবহার করতে হয়। দুনিয়াদারি জীবনে আমরা যেমন অর্থ জমি সম্পত্তি চাকরী হাতের কাছে পেলে হাতছাড়া করতে পারি না তেমনি যদি পরিবেশের কথাটাও, বলা ভালো পরিবেশের আরাম দায়ক, বিনা পয়সায় পাওয়া সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখি তাহলে কতই না ভালো হোত। আমরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসি, ফ্রীজ কেনার হিড়িকে মাতি, এটা “আমরা বড়লোক ধনী, তোদের থেকে কত ভালো আছি, সুখে থাকি” তা লোক দেখানোর জন্য এসি ফ্রীজ কিনে ঘড়ে লাগাই। তার পরিবর্তে যদি পঞ্চাশ একশো টাকা দিয়ে গাছ কিনে বাড়ীর চারপাশে রোপন করি তাহলে সেটাও যে পরিবেশ রক্ষা ও বাড়ীর সম্মান বৃদ্ধির সহায়ক হবে এটা ভাবি না। কিছু ব্যাক্তি, সামাজিক সংগঠন, বিঞ্জান মঞ্চের মতো কিছু সংস্থা সারা বছর প্রকৃতির কথা চিন্তা করে বৃক্ষরোপন সহ এসি ফ্রীজ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার করে ঠিকই কিন্তু এই প্রয়াস সমাজে সার্বিকভাবে প্রয়োগেরও দরকার আছে।

    বর্ষা আবহে মূলত দুটি জিনিস হাতের কাছে পেয়েও হাতছাড়া করেছি বা করছি। প্রথমতঃ, প্রকৃতির নিয়মে আকাশ থেকে পড়া বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি কে সঞ্চয় করতে হবে এবং বহুমুখী ভাবনায় ব্যাবহার করতে হবে। যেমন বৃষ্টির জলকে খাল, পুকুরে সঞ্চয় করে রাখা সেই জলে মৎস্য চাষ, কৃষিকাজ সহ পারিবারিক প্রয়োজনে সেই বৃষ্টির জল ব্যাবহারে জোড় দিতে হবে। এখন মাটির তলা থেকে সাবমার্শিবেলের ব্যাবহার কমিয়ে বাড়ীর ছাদে একাধিক ট্যাঙ্কে রির্জাভ করে রাখা দরকার। সেই জল বাড়ীর প্রয়োজনে ব্যাবহার করতে হবে । শখ করে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে যেমন বাড়ীর ছাদে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান তৈরী করি তেমনি বাড়ীর ছাদে জল সঞ্চয় করার পরিকল্পনাও নিতে হবে। সেই জল পারিবারিক কাজে, গাছে দিয়ে ব্যাবহার করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সঞ্চয় করা জলে মৎস্য চাষ ও বাড়ীর আশেপাশে গাছ লাগাবার উপর জোড় দিতে হবে। এখন প্রতিটি পরিবারে আধার ভোটার যেমন জরুরী, প্রতিটি শিশুকে যেমন স্কুলে পাঠানো জরুরী তেমনি প্রতিটি পরিবারে গাছ লাগানোটাও আরো জরুরী এটা ভাবতে হবে আমাদের। পাশাপাশি জল অপচয়, বৃক্ষ নিধন, পুকুর ভরাট করা, প্রাকৃতিক সম্পত্তি নষ্ট করা এগুলো আইন মোতাকেব বে-আইনী হলেও আইনী সচেতনতা বাড়ানো জরুরী। আইন সকলের জন্য, আইনের উর্দ্ধে যেমন কেউ নয় এবং বৃক্ষ নিধন, পুকুর ভরাট, প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করাও বে-আইনী এবং আইনী বিধানমতে তারও সাজা হতে পারে এই আইনী শাষনও জারি রাখা দরকার। মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতিসাধন করা যেমন বে-আইনী বলে মনে করি তেমনি এই মনুষ্যজাতি যখন প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতিসাধন করে সেটাও যে বে-আইনী তার প্রচারেও জোড় দেওয়া দরকার। এবং আইনী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

    আজ যে ভাবে প্রকৃতির উপর অবিচার, নির্মম ক্ষতিসাধনে মত্ত আমরা তাতে আগামী দিনে, আজকের শিশু সহ মনুষ্যজাতি যে ভীষণ রকম বিপদের মুখে পতিত হতে চলেছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাই এই সব সময় জল সংরক্ষন, বৃক্ষরোপণ করে দিন কয়েক আগের তীব্র দাবাদহের ভয়াবহতাকে ভয় করে, আগামী দিনের সুন্দর শান্তিময় আরামদায়ক পরিবেশ পৃথিবীর জন্য গাছ লাগানো – জল সঞ্চয়ের উপর জোড় দিতে হবে আমাদের। এবং আজ থেকেই।