|
---|
মোল্লা জসিমউদ্দিন, কলকাতা : রবিবার বিধান শিশু উদ্যান এবং সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকস্ সেন্টারের যৌথ আর্থিক সহায়তায় স্বাস্থ্য শিবির হলো। এই স্বাস্থ্য শিবির পরিচালনার সামগ্রিক খরচ যৌথভাবে বহন করল বিধান শিশু উদ্যান কমিটি এবং সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকস্ কর্তৃপক্ষ। বিনামুল্যের এই স্বাস্থ্য শিবিরে প্রায় ২০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৫০ জনের বেশী বাচ্চারা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করল। প্রাপ্তবয়স্ক জন্য ছিল হিমোগ্লোবিন, সুগার,ইউরিয়া সহ রক্তের বিভিন্ন এই পরীক্ষাগুলি। সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ এবং লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট এর ওপর গুরুত্বপূর্ণ সেশন । বাচ্চাদের জন্য ছিল বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা।এদিন যাঁরা এই শিবিরে অংশগ্রহণ করলেন পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁদের অন্যকোনো প্যাথলজিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন হলে তাঁরা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ২০% বিশেষ ছাড় পাবেন বলে জানা গেছে। এদিন সকাল থেকেই বিধান শিশু উদ্যানে এই স্বাস্থ্য শিবিরকে কেন্দ্র করে ছিল উৎসবের আমেজ। বিধান শিশু উদ্যানের প্রতিষ্ঠাতা অতুল্য ঘোষের কার্যকালে বিধান শিশু উদ্যানে সকলের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হত। পরবর্তীকালে দু’একবার এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের স্বাস্থ্য শিবিরটি অতুল্য ঘোষের কার্যকালের পর আয়োজিত সব থেকে বড় স্বাস্থ্য শিবির। সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের সকল কর্মীবৃন্দকে বিধান শিশু উদ্যানের তরফ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানায় এই শিবিরকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য। বিশেষ করে শ্রী রোনাল্ড সিকদার এবং শ্রী কাজল কর রায় মহাশয়কে। মূলত তাঁদের পরিকল্পনাতেই এই স্বাস্থ্য শিবিরটি পরিচালিত হল। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানায় ড.সুভাশিস মন্ডল,ড.দীপক কুমার হালদার,ড.সুভাশিস চক্রবর্তী এবং শ্রীমতি রুপা বসু কে। বিধান শিশু উদ্যানের সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এদিনকার স্বাস্থ্য শিবিরটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হল বলে জানিয়েছেন বিধান শিশু উদ্যান এর সম্পাদক গৌতম তালুকদার মহাশয়। । আপামর বাঙালি হৃদয়ে বিরাজমান বিধান শিশু উদ্যান। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় স্মরণে তাঁরই ‘ডানহাত’ খ্যাত অতুল্য ঘোষ গড়ে গেছেন বিধান শিশু উদ্যান থেকে বিধান শিশু হাসপাতাল। যা আজও খাঁটি বাঙালিয়ানার পথে শৈশবকাল কে উন্নতর পথে নিয়ে যাচ্ছে বিধান শিশু উদ্যান। ৪৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালে বিধান শিশু উদ্যানের পথচলা শুরু হয়েছিল। বিধান শিশু উদ্যান উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মাননীয় রাষ্ট্রপতি ড.ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ। কয়েক দশক ধরে সর্বভারতীয় রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এসে বিধান শিশু উদ্যান তৈরী করেছিলেন যিনি, তিনি অতুল্য ঘোষ। অনন্য সাধারণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন অতুল্য ঘোষ।যিনি শিশুদের কাছে ‘কানাদাদু’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য ড.বিধান চন্দ্র রায়ের স্মৃতিতে তৈরী করেছিলেন সবরকমের সুবিধা যুক্ত শিশু হাসপাতাল, উত্তর কলকাতার নারকেলডাঙ্গায় ফুলবাগানের কাছে এই শিশু হাসপাতাল টি অবস্থিত।আর সমস্ত বাচ্চাদের জন্য উল্টোডাঙ্গার হাডকো মোড় সংলগ্ন এলাকায় গড়েছিলেন বিধান শিশু উদ্যান। হাজার হাজার মানুষ যাঁরা বেড়াতে আসেন তাঁদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান বিনোদন পার্ক। আবার যেসব শিশুরা রোজ নাচ,গান,আবৃত্তি, অঙ্কন,যোগা, টেবিল টেনিস, সাঁতার, ক্রিকেট, রোলার স্কেটিং, এ্যাথলেটিক্স শিখতে আসে তাদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান শিক্ষাঙ্গন। বিধান শিশু উদ্যান তাই শুধু বিনোদন পার্ক নয় বা শুধু শিক্ষাঙ্গন নয়। এই দুইয়ের সংমিশ্রণে অন্য কিছু একটা। তাইতো ছেচল্লিশ বছর পরেও ছোটেদের কাছে বিধান শিশু উদ্যান এতো আকর্ষণীয়। অতুল্য ঘোষ বুঝেছিলেন ভবিষ্যতে বিনোদন পার্ক অনেক তৈরী হবে। কিন্তু ‘বিধান শিশু উদ্যান’ আর তৈরী হবে না। এখানেই স্রষ্টার দূরদৃষ্টির বাস্তব প্রকাশ। তাই এতো বছর পেরিয়ে এসে অতুল্য ঘোষ এর ভাবনায় বিকশিত হয়ে ‘আমাদের দাদুর ভাবনা পাথেয় করে আমরা এগিয়ে চলেছি’ বলে জানিয়েছেন বিধান শিশু উদ্যান এর সম্পাদক গৌতম তালুকদার। । তবে চলার পথে বিস্তর কাঁটা। তবুও বিধান শিশু উদ্যান আছে,থাকবে। ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাস্ট্রপতি ড.ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ রাষ্ট্রপতিভবন থেকে দশটি গোলাপের চারা নিয়ে এসেছিলেন বিধান শিশু উদ্যানে। তার মধ্যে দুটি এখোনো আছে। গাছ দুটি অজস্র ডালপালা নিয়ে আট দশ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন উদ্যান বন্ধ ছিল। বাচ্চারা আসতে পারেনি। চারিদিকে গাছ আর গাছ। ছোটোরা তো দূরের কথা বড়দের পক্ষেও সেই ঘন ঘন গাছের মধ্য দিয়ে হাঁটাচলা করা অসম্ভব ছিল। সম্প্রতি সেসব আগাছা পরিষ্কার করার পর দেখা গেল সেই গাছ দুটিতে অজস্র গোলাপ ফুটে আছে। করোনার বাড়বাড়ন্ত কমার পির ধাপে ধাপে শুরু হয়েছে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কনের ক্লাস। খেলার মাঠে আবার শুরু হয়েছে খেলুড়েদের দৌড়াদৌড়ি। গেটের কাছে সেই গোলাপ গাছটি দাঁড়িয়ে আছে ফুলের সম্ভার নিয়ে তার বন্ধুদের স্বাগত জানাবে বলে। যাদের উপস্থিতিতে বিধান শিশু উদ্যানে প্রানের সঞ্চার হয়।এই শিশু উদ্যানে শৈশব কাল অতিবাহিত করা পল্লিকবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের নিকটাত্মীয় তথা কবি মহাশ্বেতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান – ” আমি আমার দাদু ( জ্যোৎস্না মল্লিক) এর সাথে নিয়মিত যেতাম বিধান শিশু উদ্যানে।ওখানে ছবি আঁকা থেকে ব্রতচারী সমস্তকিছুই শিখেছি “। সম্প্রতি বিধান শিশু উদ্যান কর্তৃপক্ষ মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে দুদিনের কর্মশালার আয়োজন করে পড়ুয়াদের জন্য, যেখানে মহাকাশ বিজ্ঞান কে জানার জন্য অত্যাধুনিক দূরবীন সহ বিভিন্ন জিনিস আনা হয়েছিল।পাশাপাশি গাছপালা চাক্ষুষ করার জন্য ‘প্রকৃতির মাঝে বিজ্ঞান’ অনুরুপভাবে আয়োজন করা হয়েছে। তাতে নবতম সংযোজন বিধান শিশু উদ্যানের অভিভাবকমন্ডলী ও স্থানীয়দের নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির।।