মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কে তার নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দিলো এক সেবেচ্ছা সেবী সংস্থা, নেট দুনিয়ার সাহায্য নিয়ে।

‌মালদা, ০৭ আগস্ট ।  বাড়ির লোকেরা ভেবে নিয়েছিলেন তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে হয়তো মারাই গিয়েছেন। আর সেই ছেলের ফুলের মালা দেওয়া ছবি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাড়িতে। তিন বছর পর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এবং গুগল ম্যাপ থেকে ঠিকানা জেনে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে বাড়িতে ফিরিয়ে দিলেন মালদার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। যদিও এই কাজে হবিবপুর থানার পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার একাংশ গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করেছেন । বিহারের ওই যুবককে মঙ্গলবার তার নিজের বাড়িতে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন পরিবারের লোকেরা । ভাবতেই পারছেন না তিন বছর পর তাদের ছেলে অন্য রাজ্য থেকে নিজের বাড়ি বিহারে ফিরে আসতে পারে। এই ঘটনার বিষয়ে মালদার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন পরিবারের বিদ্ধজনেরা।

    গত এক মাস আগে হবিবপুর থানার সিঙ্গাবাদ স্টেশনের কাছে তুলসি কুমার সাউ নামে ২৪ বছর বয়সী ওই যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয় কিছু মানুষ।  গায়ে দুর্গন্ধ, ছেঁড়া জামা কাপড় পরা অবস্থায় পেটের জ্বালায় নিকাশি নালার জল তুলে খেতে দেখা যায় ওই যুবককে। মানবিকতার খাতিরে স্থানীয় গ্রামবাসীরই ওই যুবককে উদ্ধার করে এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের হাতে তুলে দেন। এরপর শুরু হয় ওই যুবকের খাতিরদাডরি। চুল কেটে, সাবান -শ্যাম্পু মাখিয়ে পরিষ্কার করার পর তাকে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে রাখা হয় হবিবপুর  এলাকারই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একটি অফিস ঘরে। এর পাশাপাশি শুরু হয় ওই যুবকের নাম, পরিচয় জানার বিষয়টি।

    হবিবপুরের স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা তারাশংকর রায় বলেন, যেভাবে ওই যুবককে আমরা সেবা করা শুরু করেছিলাম। তাতে সে অনেকটাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। আর তার থেকেই ওই যুবকের নাম , গ্রামের ঠিকানা জানতে পারি । গুগলস ম্যাপের মাধ্যমে বিহারের মুঙ্গের জেলার বালিয়া নামক একটি গ্রামের সন্ধান পায় ।এরপর শুরু হয় খোঁজখবর।  তুলসী কুমারের বাবা সোতি সাউ । পরিবারে তাদের ভাই , বোন, মা সকলে রয়েছেন। কিন্তু তিন বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন থাকার সময় বিহারের কোন একটি ট্রেনে উঠে পড়েছিল ওই যুবক। আর তার পরবর্তী ঠিকানা হয় মালদা টাউন স্টেশন। ঘটনাচক্রে এসে পড়ে সিঙ্গাবাদে। দীর্ঘদিন ধরেই সিঙ্গাবাদ এই ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তুলসি কুমার সাউ। পরবর্তীতে তাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

    তারাশঙ্কর বাবু বলেন , বিহারে ওই যুবকের বাড়ির লোকেরা ভেবে নিয়েছিল তাদের ছেলে হয়তো আর এই জগতে নেই। তাই ছবিতেও ফুলের মালা চেপে গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর জলজ্যান্ত ছেলেকে দেখে সকলে তাজ্জব হয়ে যাওয়ার জোগাড় । সম্ভ্রান্ত ঘরের ওই যুবক যে এরকম ভাবে মালদায় চলে আসতে পারে তা কখনোই ভাবেনি তার পরিবারের লোকেরা। যেভাবে হোক আমরা তুলসি কুমার সাউকে তার নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি । এরকম ভাবেই গত ছয় মাসে সাতজন ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোর-যুবকদের তাদের নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পেরেছি।

    উত্তর মালদা সাংসদ তথা  হবিবপুরের প্রাক্তন বিধায়ক খগেন মুর্মু বলেন,  ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন । হবিবপুরের পাশাপাশি মালদার নাম ও গর্বিত করেছে। তারা এরকম সামাজিক কাজ নিয়ে যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারে সেই আশায় রাখি।

    হবিবপুরের আইসি ত্রিদিব প্রামানিক জানিয়েছেন,  ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা এর আগেও হবিপুর থেকে বেশকিছু ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোর-যুবকদের তাদের নিজেদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সংশ্লিষ্ট থানার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

    ছবি —– বিহারে যাওয়ার আগে হাবিবপুর উদ্ধার বিহারের ভবঘুরে যুবক ।