|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম: বীরভূমে শনিবার পূর্ণিমার দিন মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হলো ধর্মরাজ পুজো। এই পুজো কে কেন্দ্র করে বীরভূমের গনপুরে হাজার হাজার ভক্ত শামিল হন। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই পুজো ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা চরমে। প্রথা অনুসারে শুক্রবার গ্রামের ৫১ জন ভক্ত জাগরণ ও আহরণ পর্ব সেরে শনিবার বীরভূমের গণপুর পঞ্চায়েতের গোপালনগরের জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত ধর্মরাজের থানে পূজো অর্চনার মধ্য দিয়ে এই পুজোর সূচনা করেন। ভক্তরা রাত জেগে সমস্ত দেবদেবীকে মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে আহ্বান করে থাকেন। এরপর সুরা দিয়ে দেবতাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। এরপর স্থানীয় ভক্ত নিশির কুমার হাজরার বাড়ির প্রাঙ্গনে ধর্মরাজের থানে এসে ভক্তরা সেখানে দেবতার স্তুতি গান। পরে গোপালনগরের জঙ্গলে ধর্মরাজের থানে যান। এই ধর্মরাজ পুজোর অন্যতম ব্যবস্থাপক স্থানীয় কবি ও সাংবাদিক শ্রী শিশির কুমার হাজরা জানান এই পুজো প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসছে। তাদের বাড়ির প্রাঙ্গণে যে দেবতার থান রয়েছে সেটি তার দাদু তৎকালীন জমিদার শ্রী রাখাল চন্দ্র হাজরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্মরাজ পূজা উপলক্ষে ভক্তরা এদিন ব্রত করে থাকেন। নিশির বাবু জানান তার এক ভাইপো কিশোর হাজরা, সেও এবার ব্রত করেছে। এই ব্রত করলে দুদিন বাড়ির বাইরেই দিন কাটাতে হয়। এটি প্রাচীন প্রথা। গোপালনগরের জঙ্গলে যেখানে ধর্মরাজের মূর্তি রয়েছে সেখানে সে সময়কার রাজা একটি সোনার ঘোড়া তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেটি এখন আর নেই। তার স্থলে ভক্তরা পিতলের ঘোড়া তৈরি করে দিয়েছেন। জনশ্রুতি এখনো অনেকেই জঙ্গলের মধ্যে কোন এক দিব্যজ্যোতি ব্যাক্তিকে ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে দেখেছেন। ভক্তদের বিশ্বাস ধর্মরাজের অস্তিত্ব এখনো মানুষ এইভাবেই টের পায়। গোপালনগর গ্রামের এই ধর্মরাজের পুজো দেখতে উপস্থিত হন কাঁটাপাহাড়ি, শাপলা, শিবপাহাড়ি সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার ভক্ত। এই পূজাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের একটি মেলাও বসে। এখন তীব্র দাবদাহে পুড়ছে বীরভূম। সেদিকে খেয়াল রেখেই স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ভক্তদের জন্য পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।