|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদন: পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যেতে চান? কিন্তু ভেবে উঠতে পারছেন না কোথায় যাবেন! চিন্তা নেই ঘুরে আসুন হাতের কাছে চার বাংলা মন্দিরে। বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাটোরের মহারানি ভবানী। ইতিহাস আর জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, সালটা ১৭৫৫।
পলাশীর যুদ্ধের দু’বছর আগে ভাগীরথীর তীরে মুর্শিদাবাদে এলেন নাটোরের রানি ভবানী। উদ্দেশ্য গঙ্গার তীরে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাবেন। ১৭৬০ সাল নাগাদ আজিমগঞ্জের বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে শুরু করলেন ধর্মপ্রাণা রানি। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদে গঙ্গার তীরে বড়নগরে দ্বিতীয় বারাণসী গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন। শোনা যায়, খুব অল্প সময়ে শুধু বড়নগরে প্রায় ১০৮ টি মন্দির তৈরী করেছিলেন রানি ভবানী। যার বেশিরভাগই এখন নদীগর্ভে বিলীন।
রানি ভবানীর তৈরি মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম ‘চার বাংলা’ মন্দির। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এক বাংলা, জোড় বাংলা মন্দির দেখা গেলেও আজিমগঞ্জেই একমাত্র চার বাংলা মন্দির রয়েছে। একটি উঠানকে ঘিরে চারটি একচালা বাংলা স্থাপত্য রীতির মন্দির। এই বিশেষ স্থাপত্য রীতির জন্যই চারটি মন্দির একত্রে ‘চার বাংলা’ নামে পরিচিত। বাংলার প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এই মন্দিরগুলিতে।তিনটি খিলান দেওয়া দরজার প্রতিটি মন্দিরে তিনটি করে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। এখনও প্রতিদিন ১২টি শিবলিঙ্গের পুজো হয়। উত্তরদিকের দক্ষিণমুখী মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজে রামলীলা কৃষ্ণলীলা দৃশ্য দেখা যায়, এ ছাড়াও রয়েছে মৃগয়া ও শোভাযাত্রার দৃশ্য। পশ্চিমদিকের মন্দিরে যুদ্ধের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে টেরাকোটার মাধ্যমে। অন্য একটি মন্দিরের দেওয়ালেও রয়েছে খুবই সূক্ষ্ম কারুকার্য। দক্ষিণ দিকের মন্দিরে বিশেষ কারুকার্য দেখা যায় না।ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, প্রথম দিকে বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করলেও পরে তিনি এই কাজ এক প্রকার বন্ধ করে দেন। রানির ব্যক্তিগত জীবনে তখন টালমাটাল অবস্থা। সন্তান ও জামাই বিয়োগে দিশেহারা রাণী বাল্য বিধবা মেয়ে তারাসুন্দরীকে কাশীতে পাঠিয়েছিলেন।
একসময় জমিদারি বিস্তৃত ছিল বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ছাড়িয়ে মালদহ পর্যন্ত। তাঁর আমলে জমিদারির এই বিশাল বিস্তৃতির জন্য তৎকালীন বাংলায় তিনি ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে পরিচিত ছিলেন। ইতিহাস বলছে, রানি ভবানী তাঁর জমিদারির তরফে নবাবকে বছরে ৭০ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিতেন। কয়েকবছর আগেও গঙ্গার গ্রাসে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল ‘চার বাংলা’।
মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত হাজার দুয়ারী থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত এই মন্দির। কলকাতা থেকে ট্রেনে জিয়াগঞ্জ স্টেশনে নেমে নদী পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন আজিমগঞ্জ। সেখান থেকে টোটো নিয়ে পৌঁছে যান বড়নগরে। এছাড়াও হাওড়া থেকে সরাসরি আজিমগঞ্জের ট্রেন রয়েছে। স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরেই রয়েছে বড়নগর। চার বাংলা ছাড়াও বড়নগরে রানী ভবানীর তৈরি বঙ্গেশ্বর মন্দির, ভুবনেশ্বর মন্দির, জোড়া বাংলা মন্দির, রাজরাজেশ্বরী মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির রয়েছে। পুজোয় ছুটি কাটাতে দুই দিন থেকে তিনদিন ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। নবাবের শহরের উপকণ্ঠে ছুঁয়ে দেখুন ২৫০ বছরের এক বিস্মৃত ইতিহাসকে। হলফ করে বলা যায়, ভাল লাগবে।