শান্তিপুরের গ্রামে-গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলের প্রার্থী রূপালী বিশ্বাস

শরিফুল ইসলাম, নতুন গতি : ‘পথেই হবে পথ চেনা’– শান্তিপুর তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের হাত থেকে সংবর্ধনা নেওয়ার সময় প্রত্যয়ী রূপালী বিশ্বাসের অভিব্যক্তি যেন সেই রকমই কথা বলছিল।

    রাজনৈতিক কারণে স্বামী হারিয়ে স্বামীর রাজনীতির পথেই স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে, স্বামীর পথে বেঁচে থাকাই তো এখন তাঁর মূল মন্ত্র। তাই এই পথে কে আপন কে পর চিনে নিতে তো তাঁকে হবেই।

    আজ শুক্রবার, শান্তিপুর বিধানসভা অভ্যন্তরীন ছ’টি পঞ্চায়েতে প্রার্থী পরিচয় পর্বের আগে, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রুপালী বিশ্বাস কে বিধায়ক অরিন্দম বাবু দলীয় কার্যালয় ‘শান্তিপুর বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস ভবন’-এ সংবর্ধনা দেন।

    তৃণমূল ভবনে দলীয় প্রার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়ার পর বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য প্রার্থী রুপালী বিশ্বাস কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বিধান সভার মধ্যে পড়ে সেই পঞ্চায়েত গুলিতে নিয়ে যান এবং সেখানে দলের কর্মী-নেতা ও সমর্থকদের সঙ্গে পরিচয় করান।

    এদিন,গয়েশপুর,বাগাআঁচড়া, হরিপুর পঞ্চায়েত হয়ে বাবলা, বেলঘড়িয়া-২ ও বেলঘড়িয়া -১ -এ প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস কে সঙ্গে নিয়ে বিধায়ক তাঁর বিধান সভায় গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ, দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বলেন,
    “আজ, একটি বিশেষ দিন।এই পবিত্র দিনে আমরা আমাদের লোকসভার প্রার্থীকে নিয়ে এলাম। নদীয়ার যুব আন্দোলনের নেতা, ওঁর স্বামী সত্যজিৎ বিশ্বাস, সাধারণ মানুষের দাবি পুরণের আন্দোলন করতে গিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল
    বিচ্ছিন্নতাবাদি সাম্প্রদায়িক বিজেপির ঘাতক বাহিনীদের হাতে খুন হয়ে যান।
    রুপালী খুব ছোট। আমাদের বোনের মতন। সংসার-পরিবার ছেড়ে আপনাদের বক্তব্যকে সংসদে পৌঁছে দিতে দিদির আশীর্বাদের হাত মাথায় নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছেন। রুপালী যেন শান্তিপুর থেকে রেকর্ড মার্জিনে জয়ী হয়, তাঁর জন্য দোওয়া-আশীর্বাদ করুন।
    জনবিরোধী, সর্বনাশ সৃষ্টিকারী,মিথ্যাবাদী বিজেপিকে দিল্লির মসনদ থেকে উৎখাত করে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রে একটি জনদরদী সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।”

    আজ ছিল ১৩ নম্বর রানাঘাট তফসিলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর শান্তিপুর বিধানসভার জি.পি. ওয়ারী পরিচয় পর্বের প্রথম দিন।

    শান্তিপুর বিধানসভার প্রত্যেকটি অঞ্চলে তৃণমূল প্রার্থী রুপালী বিশ্বাসকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতন।

    জেলায় দীর্ঘ দিনের যুব আন্দোলনের নেতৃত্ব, অন্যতম মতুয়ামুখ, পড়শী বিধানসভার বিধায়ক হওয়ার সুবাদে প্রয়াত সত্যজিৎ বিশ্বাস শান্তিপুরেও বেশ পরিচিত মুখ ছিল।

    মাস দেড়েক আগে সরস্বতী পুজো মণ্ডপে তিনি খুন হন। বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের আবেগঘণ কণ্ঠে এ হেন রূপালীর
    কথা শুনে সদ্য স্বামী হারা সত্যজিৎ-জায়া রূপালী বিশ্বাস কে গ্রামের মানুষ কাছে পেয়ে আবেগে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।

    শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ এবং ভালোবাসার জোয়ারে অভিভূত আপ্লুত তৃণমূল প্রার্থী রূপালীও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

    নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণার পরই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র টিতে কৃষ্ণগঞ্জের প্রয়াত বিধায়ক সত্যজিত বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালি বিশ্বাস কে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন।

    কখনো কোলের ছেলে সৌমজিৎ কে সঙ্গে নিয়ে, কখনো নিকটাত্মীয়ের কোলে রেখে প্রতিদিনই এখন রুপালি ছুটছেন রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধান সভার কোনো না কোনো
    ক্ষেত্রে। চৈত্রের প্রখর দাবদাহ উপেক্ষা করে মানুষের দরবারে। অনিয়ম আর ক্লান্তির ছাপ দুটি চোখে স্পষ্ট।

    মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসতেন সত্যজিৎ। তাঁর ভালোলাগা কাজের মধ্যেই তাঁর স্মৃতি বুকে বেঁধে বেঁচে থাকতে চান রুপালী।

    এত বড় দায়িত্ব। পারবেন ?

    –“পারতে আমাকে যে হবেই।”

    ছোট্ট প্রত্যয়ী এক লাইনের জবাব।

    এতদিনে পঁচিশেও হয়তো তিনি বুঝে গেছেন, এই লড়াই তাঁর একার নয়। এবং
    মুখ্যমন্ত্রী, পরিবার , দল, সাধারণ মানুষ সকলেই
    তাঁর পাশে রয়েছেন।

    আজ, শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য সকাল থেকেই শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী রূপালী বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন। ছিলেন নদীয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু, সদস্য নিমাই বিশ্বাস, সমাজসেবী সুব্রত কর, বিভিন্ন গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান-উপপ্রধান, সদস্য সহ তৃণমূল মূল কংগ্রেসের ব্লক ও শহরের বিভিন্ন নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন শান্তিপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সুভাষ ঘোষ, সুব্রত বিশ্বাস প্রমুখ।

    এদিন, তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে শান্তিপুরের চেয়ারম্যান অজয় দে কে দেখা যায়নি।