দৈব্যশক্তির বলে চলছে চিকিৎসা, ভুয়ো চিকিৎসকের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত এলাকার মানুষ

আজিম শেখ ,নতুন গতি, তারাপীঠ: অদ্ভুত দৈব্যশক্তি বলে দিনের পর দিন চুটিয়ে রোগী দেখে চলেছেন এক ব্যক্তি। গ্রামবসীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বার বার গনস্বাক্ষরিত অভিযোগ জমা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানালেন এক গ্রামবাসী। আশা এবার হয়তো বন্ধ হবে চিকিৎসার নাম প্রতারণা।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধ চিকিৎসকের নাম মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী ওরফে কালিশংকর। বাড়ি কলকাতার ২২৯ পূর্ব সিঁথি রোড, ঘুঘুডাঙা। বছরখানেক ধরে তিনি তারাপীঠ মুণ্ডমালিনী তলার কাছে বাড়ি বানিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। নামের আগে ডাক্তার লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ও ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে বাড়িতেই চেম্বার খুলে চুটিয়ে চিকিৎসা করে চলেছেন। হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপাথি দুই ধরনের চিকিৎসা শাস্ত্রে তিনিই যে পারদর্শী সেটাও সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে। সেই সঙ্গে দৈব্য শক্তি সম্পন্ন চিকিৎসাও করেন। এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী তার কাছে আসেন। তাঁদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি ইনজেকশনও তিনি নিজেই দেন। তার বিনিময়ে কারোর কাছে তিনশো আবার কারোর কাছে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত তিনি নেন। তিনি আবার ‘জীবন্ত আবিস্কার’ নামে বিভিন্ন রোগ ও তার উপশম নিয়ে একটি ছোট বইও লিখেছেন। সেখানেও তাঁর নামের আগে ডাক্তার লেখা রয়েছে। ওই পুস্তিকায় তিনি দাবি করেছেন, দিল্লী বা ভেলোর ফেরৎ নিরাশ রোগীদের তিনি অদ্ভুত দৈব্যশক্তি সম্পন্ন হোমিও চিকিৎসা ও ন্যাচোরোপ্যাথী চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলবেন। লিভার, হার্ট, কিডনিরও চিকিৎসা করেন। স্বভাবতই তাঁর কাছে আসতে শুরু করেন এলাকা সহ আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু রোগ নিরাময় না হওয়ায় ওই চিকিৎসককে নিয়ে তাঁদের মনে সন্দেহ জাগে।

    চলতি বছরের ১২ জুলাই গ্রামের মানুষ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রামপুরহাট মহকুমা শাসক নাভেদ আখতারের কাছে গনসাক্ষরিত অভিযোগ জমা দেন। মহকুমা শাসক অভিযোগ পত্র রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায় সেরেছেন। প্রশাসনের দায়সারা মনোভাবের ফলে বাধ্য হয়ে ২০ জুলাই চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। তাতেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। ভুয়ো চিকিৎসকের দৈব্য শক্তির কাছে পিছু হঠে প্রশাসনিক কর্তারা। এবার দিদিকে বলো নম্বরে ফোন করেন গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস। সেখানেও দেখছি আশ্বাস ছাড়া কিছু মেলেনি। এদিকে মহকুমা শাসক বদলি হয়ে যান। নতুন মহকুমা শাসক হিসাবে যোগ দিয়েছেন শ্বেতা আগরওয়াল। তাকে নতুন করে অভিযোগ জমা দেন। তারপরও কোন হেলদোল দেখা যায়নি।

    রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, “মানুষ ওই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এমনকি তারাপীঠের মতো একটি তীর্থক্ষেত্রে বহু পুন্যার্থী চিকিৎসার জন্য তার কাছে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা দিদিকে বলো নম্বরে কথা বলেছি। নতুন মহকুমা শাসককেও জানিয়েছি”।

    মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাস্তরের আধিকারিকদের নিয়ে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে ফিরে আসার পর আমরা রিপোর্ট মহকুমা শাসকের কাছে জমা দেব”।