ফুলহার নদীর ভাঙ্গন পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন জেলাশাসক

মালদা,  ২৫ জুলাই ।  সূর্যাপুর গ্রামে ফুলহার নদীর ভাঙ্গন পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন জেলাশাসক সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্তারা। জেলার প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সামনে শতাধিক গ্রামবাসীরা ভাঙন ঠেকানোর স্থায়ী সমাধানের দাবি তোলেন। গ্রামবাসীদের  সমস্যার কথা শোনার পর প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে রতুয়া ১ ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সূর্যাপুর গ্রামে গিয়ে ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, মালদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌর চন্দ্র মন্ডল সহ অন্যান্য প্রশাসনের কর্তারা

    কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সূর্যাপুর গ্রামের বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রতিবছর এলাকায় নদীর ভাঙ্গন হচ্ছে। প্রচুর জমি, আমবাগান তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যায় বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছেন। অথচ বর্ষার মরশুমে দায়সারাভাবে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে সেচ দপ্তর । এই এলাকায় ফুলহার  নদীর ভাঙ্গন ও প্লাবন ঠেকাতে স্থায়ী সমাধান দরকার।  বালির বস্তা ফেলে অস্থায়ী রিং বাঁধ তৈরি করে সমস্যার সমাধান কোনওদিনই মিটবে না।

    জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এলাকার মানুষ ভাঙ্গন ও প্লাবন ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের দাবি করেছেন। তবে এখন যা অবস্থা এই মুহূর্তে রিং বাঁধ করার একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেচ দপ্তর । আপাতত এই কাজের পরই স্থায়ী একটা সমাধানের আমরা পথ খোঁজার চেষ্টা করব।  নদীর মাঝে একটি চর রয়েছে। সেটিকে একটি চ্যানেল তৈরি করারও দাবি এলাকার মানুষ করেছে। যাতে সূর্যাপুর গ্রামের ভাঙ্গন ঠেকানো সম্ভব হবে। কিছু মানুষ নিজেদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা বলেছেন।  সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজন মতোই স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

    উল্লেখ্য,  গত দুই সপ্তাহ ধরে ফুলহারের নদীর দাপটে রতুয়া ১ ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সূর্যাপুর এলাকার নদীবাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার অংশ তলিয়ে গিয়েছে।  ফাটল ধরেছে বাঁধের অন্যান্য অংশেও। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধের বিস্তীর্ণ এলাকা ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা গ্রামবাসীদের। যারফলে রতুয়া ১ ব্লকটি সম্পূর্ণভাবেই ফুলহার নদীর জলে প্লাবিত হবে বলেও আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে সূর্যাপুর গ্রামে ফুলহার নদীর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ সুপার আলোক রাজোরিয়া, মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডল সহ সেচ দপ্তরের আধিকারিকেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় প্রশাসনের কর্তাদের।

    ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার মরশুমে যখন ভাঙ্গন , প্লাবন হচ্ছে তখনই প্রশাসনের কর্তাদের দেখা যাচ্ছে। অথচ অন্য সময় এলাকার বাঁধের অবস্থা নিয়ে কোনোরকম তদারকি করতে দেখা যায় না প্রশাসনিক কর্তাদের। এখন বলা হচ্ছে বস্তা ফেলে রিং বাঁধ তৈরি করা হবে। কিন্তু এই রিং বাঁধে স্থায়ী সমাধান কিছুই হবে না ।

    সূর্যাপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ কুমার সিং বলেন, বাঁধের উপরে বস্তা ফেলে কোন লাভ হবে না। মাটির তল দিয়ে নদী কাটছে । নদীর নিচ থেকে ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ না করা হয়। তাহলে সরকারের টাকা জলে চলে যাবে । এজন্যই আমরা স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। রিং বাঁধ করে কোন সমস্যার সমাধান হবে না।

    মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডল বলেন,  এখন যা অবস্থা তাতে আপাতত ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য বালির বস্তা ফেলে রিংবাঁধ করা ছাড়া কোন উপায় নেই । পরবর্তীতে নদীর জল কমলে স্থায়ী সমাধান করার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে । তবে এলাকার মানুষ নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। কিছু মানুষ ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আমরা তাদের বুঝিয়েছি। স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনার কথা মানুষকে জানানো হয়েছে।

    ছবি ——– রতুয়ার সূর্যাপুর গ্রামে ফুলহার নদীর ভাঙ্গন পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে জেলা প্রশাসনের কর্তারা।