স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার সাথে সাক্ষাত করে রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: মুখোশটা ক্রমশই খুলে পড়ছে। আর মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ছে ‘রাজনৈতিক এজেন্টের’ মুখ। দিল্লির রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি রেখে ‘দয়ায়’ পাওয়া সাংবিধানিক পদ বাঁচাতে ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পদ্ম শিবিরের নেতাদের মতোই তৃণমূল সরকারকে বিঁধলেন বঙ্গের নয়া ছোটলাট জগদীপ ধনকর। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ‘গোপন’ বৈঠক শেষেই অভিযোগ করেছেন ‘গোটা রাজ্যজুড়ে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। নৈরাজ্য চলছে।’ আগামী বিধানসভা ভোট নির্বিঘ্নে হবে কিনা তা নিয়েও বিজেপি নেতাদের মতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

     

    আর রাজ্যপালের এমন বিজেপি বান্ধব রাজনৈতিক এজেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটাকে কিছুতেই ভালচোখে দেখেননি শাসকদল তৃণমূলের পাশাপাশি দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য ও সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ি কার্যত একসুরেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ধনকড়ের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন ‘বিজেপির শাসনামলে ‘জঙ্গলরাজে’ পরিণত হওয়া উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন রাজ্যপাল নীরব?’

     

    রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়ে আসার পরেই লাগাতার রাজ্য সরকারকে নিশানা করে চলেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা জগদীপ ধনকর। এদিন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কাজকর্ম নিয়ে নালিশ ঠুকতে রাজনৈতিক প্রভু তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে ‘গোপন’ বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকের পরেই রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে প্রচারের আলোকবৃত্তে থাকার জন্য সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন ‘প্রচারলোভী’ রাজ্যপাল। সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে তিনি জানান পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি,রাজ্যের আরও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাঁর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশদে কথা হয়েছে।

     

    তার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন বঙ্গের নয়া ছোটলাট। তাঁর অভিযোগ ‘রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলা ও পুলিশ আধিকারিকরা অর্থাৎ আইএএস ও আইপিএসরা সরাসরি শাসকদলের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। আমলাতন্ত্রের সম্পূর্ণ রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে।’ রাজ্যে বিজেপির আধাসিকি নেতাদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ধনকর বলেন ‘গোটা রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে। বিরোধীদের (পড়ুন বিজেপির) কণ্ঠস্বর রোধ করা হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ১৬ দিন ধরে এক বিজেপি কর্মীর দেহ হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে। হাইকোর্টের রায় থাকার পরেও ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে না।’

     

    আগামী নির্বাচনে বাংলার ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু একুশের ভোট কতটা নিরপেক্ষ ও হিংসামুক্ত হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণের পথে হেঁটেছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা ও রাজ্যপালের চোলাধারী ধনকর। প্রশান্ত কিশোর যে তাঁর রাজনৈতিক প্রভুদের স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটাতে পারে সেই আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে বঙ্গের ছোটলাট বলেছেন ‘রাজ্যে ক্ষমতার অলিন্দ তাঁরা দখল করছেন যাঁদের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’ রাজ্যপাল হিসেবে বাংলায় যে তাঁকে প্রশাসনের আধিকারিকরাও আর সম্মান দেন না সেই অভিযোগও করেছেন ধনকর। এ প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে নিশানা করেছেন তিনি।

     

    দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথা ‘রাজনৈতিক প্রভু’ অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর ধনকর যেভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তাতে বেজায় চটেছেন শাসকদল তৃণমূলের নেতারা। লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে রাজ্যপালকে বিজেপির ‘লাউডস্পিকার’ বা মুখপাত্র বলে কটাক্ষ করেছেন। সেইসঙ্গে ‘রাজভবনের কলঙ্ক’ বলে আক্রমণ করেছেন। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন ‘আমরা তো বহুবার বলেছি উনি রাজ্যপাল নন, বিজেপি নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজভবনকে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। বাংলায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কথা বলছেন। উত্তরপ্রদেশে কী ঘটছে সেদিকে নজর দিচ্ছেন না কেন? যোগী রাজ্যে যা ঘটছে তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেন?’