হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রতিবন্ধি গৃহবধূর মৃত্যুতে ধোঁয়াশা, হত্যা নাকি আত্মহত্যা? হরিশচন্দ্রপুর,মহ: নাজিম আক্তার,১৩ মার্চ : শুক্রবার

 

    হরিশচন্দ্রপুর,মহ: নাজিম আক্তার,১৩ মার্চ : শুক্রবার ভোরে মালদহের হরিশচন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর এলাকার একটি আমবাগানে গাছের ডালে এক প্রতিবন্ধী গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।জানা গেছে মৃত গৃহবধূর নাম রেশমা খাতুন(২৯)।বাড়ি হরিশচন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ইসলামপুর গ্রামে।এক প্রতিবন্ধী গৃহবধূ গাছে উঠে কি করে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারে তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিবার সহ আত্মীয়ের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।এই ঘটনার তদন্তে স্বামীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ওসমান আলীর দুটি বিয়ে,সাত বছর আগে বিহারের আজিমনগর থানার দানিয়া এলাকায় গুল্লি বিবি কে বিয়ে করে।তিন বছর সংসার করার পর গুল্লি বিবি স্বামীকে ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। তারপর পেটের দায়ে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সেখানে বিয়ে করে আলাদা সংসার করে বলে পরিবার সূত্রে খবর।গুল্লি বিবির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।সাত বছরের মেয়েকে নানার বাড়িতে রেখে ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে ভিন রাজ্যে রয়েছে গুল্লি বিবি। বাবা ওসমান আলির তার প্রথম পক্ষের মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার কথাও ছিল বলে জানা যায়। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী রেশমা খাতুন। তার একটি তিন মাসের শিশুকন্যা রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী ও তিন মাসের শিশু কন্যা ছাড়া তার বাড়িতে কেউ নেই। শিশুটিকে কে লালন পালন করবে এই নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে আত্মীয়-স্বজনের।

    মৃতার দাদা রাশেদ আলি জানান,বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে তার বোনের নামে জামাইবাবুকে ১০ কাঠা জমি দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান।বিয়ের দেড় বছর কেটে গেলে ওসমান আলি জমির জন্য তার বোনকে বারেবারে চাপ দিত ।এই নিয়ে পরিবারে একটা অশান্তি লেগেই থাকত বলে জানান।তার বোন এমনিতেই প্রতিবন্ধী তার ওপরে মানসিক রোগী।মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে এই নিয়ে ধন্দে রয়েছে মৃতার পরিবারসহ পুলিশ প্রশাসন।
    যদিও মৃতার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটিকে অস্বীকার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

    স্থানীয় বাসিন্দা রুকসেদ আলি ও রুস্তম আলি জানিয়েছেন,প্রায় দেড় বছর পূর্বে ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত রাহানুল হকের মেয়ে রেশমা খাতুনের সাথে মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা উসমান আলির ইসলাম ধর্ম ও সামাজিক প্রথা মেনে বিবাহ হয়।বিয়ের পরে তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রায় তিন মাস পূর্বে একটি শিশু সন্তানের জন্ম হয়। তারা বেশ সুখেই ছিল। তাদের পরিবারে এরকম কোন অশান্তি দেখিনি বলে জানান। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেই আসল সত্যতা উঠে আসবে বলে আশা স্থানীয়দের।

    আরো জানাগেছে,বৃহস্পতিবার রাতে এক সাথে তারা ঘুমান।তবে রাত প্রায় ২ টা নাগাদ হটাৎ করে রেশমা বিছানা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বলে শ্বশুরবাড়ি লোকের দাবি।ফলে তার স্বামী উসমান আলি আসে পাশে খোঁজা খুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনি বলে এমনটাই দাবি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের।

    অন্যদিকে এদিন সকাল প্রায় ৫টা নাগাদ আব্দুল মতিন নামে এক স্থায়ী বাসিন্দা সেই আমবাগানের নিকট সবজির জমি থেকে আসার পথে আম গাছের ডালে ওই গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করলে সেখানে ছুটে যায় স্থানীয়রা।খবর পেয়ে হাজির হয় ওই গৃহবধূর স্বামী উসমান আলিও।এর পর খবর জানানো হয় হরিশচন্দ্রপুর থানায়।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ।পুলিশ গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বলে খবর।