হিরো আলম- একটা বিপ্লবের নাম!

নিজস্ব সংবাদদাতা:  হিরো আলম ওরফে আশরাফুল হোসেন আলম নামটির সাথে অনেকেই পরিচিত। তিনি একজন স্বাধীন শিল্পী। তাঁকে নিয়ে বহু ট্রোল, খোরাক, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে এবং তা সত্বেও তিনি নিজের পথে অটল। কোন রকম সামাজিক বৈধতাকে তোয়াক্কা না করেই তিনি নিজের কাজ করে চলেছেন।

    আসলে পুরুষ মানুষ মাত্রেই সমাজ তাহার জন্যে খাপ খুলে বসে আছে। হাজার একরকম মাপদণ্ডে তাকে ফেলে তার খুঁত খুঁজে বের করতে সবাই সদা প্রস্তুত। একটি পুরুষ মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি বিষয় যেন সমাজ ঠিক করে দিচ্ছে, সে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে যে বাঁচবে তার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া প্রকৃত পুরুষ হবার এমন এক কঠিন মাপকাঠি তৈরী করে দেওয়া হচ্ছে যেখানে ‘আদর্শ পুরুষ’ কেবলমাত্র রূপকথার জগতেই বাস করে।

    এই রূপকথার পিছনে ইঁদুর দৌড়ে দৌড় করতে গিয়েই সিংহভাগ পুরুষ নিজের সমস্ত সুখ, চাহিদা, স্বপ্ন বিসর্জন দেয়। যে সমাজ ব্যাক্তি পুরুষের দুপয়সারও মূল্য দেয়না সেই সমাজেরই তুষ্টিকরণ ও বৈধতা প্রাপ্তির লক্ষ্যে জীবন অতিবাহিত করে।
    এইরকম পরিস্থিতিতেই জনাব আশরাফুল আলম একটি উল্কাপিণ্ডের ন্যায় নেমে এসে সমস্ত অচলায়তনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে। তথাকথিত ‘হিরো’র মতো দর্শন না থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রচলিত মাপকাঠি ভেঙ্গে নিজেকে হিরো ভাবতে পেরেছেন এবং দেখিয়েছেন যে কীভাবে তা সম্ভব হয়। মানুষকে তৈরী করে সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিই সুন্দর। তাই নায়ক হবার কারণে কোন নির্দিষ্ট চেহারার বা রূপের দরকার নেই, দরকার নায়কোচিত মননের।কী সেই মনন? নিজেকে ভালোবাসার মতো শক্তিশালী হৃদয়, চরম সাহস যা যে কোন প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারে, নিজের প্রতি চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি সামাজিক বৈধতাকে উপেক্ষা করে নিজে যা ভালোবাসে তা করতে পারে এবং আপোসহীনভাবে নিজের স্বপ্নপুরণ করতে পারে। ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে “হিরো আলম” কে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসাবে অ্যাওয়ার্ড দিলেন পুরুষ অধিকার কর্মীরা! উপস্থিত ছিলেন পুরুষ অধিকার কর্মী সৈকত ভট্টাচার্য ও সাকিব হাসান সহ চিত্র পরিচালক সালাউদ্দিন গোলদার ও সহ পরিচালক রাজিব।

    প্রথম জীবনে আর্থসামাজিকভাবে কষ্টকর জীবনে বড় হলেও বহু সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি এই স্থানে পৌঁছেছেন। তিনি নিজে যেটা ভালোবাসেন সেটাই করছেন, তাতে কে কী বলল কোন কিছুই যায় আসেনা। তার সাথে আর পাঁচটি গড়পড়তা মানুষের তুলনা করে দেখুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। উনি যা করার সাহস দেখিয়েছেন, তার নিন্দুকদের মধ্যে সেই সাহসের এক শতাংশও নেই।
    এই কারণেই হিরো আলম একটি ব্যক্তি নয়, এক বিপ্লবের নাম। কমপক্ষে বাঙালী পুরুষদেরকে তিনি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রকৃত নায়ক কীভাবে হতে হয়। আমরা প্রত্যেক পুরুষই নিজের জীবনের নায়ক হতে পারি। আমরা প্রত্যেকেই সুন্দর হয়ে উঠতে পারি যদি সমস্ত প্রচলিত মাপকাঠিকে ছুঁড়ে ফেলে দিই এবং সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে রূপে সৃষ্টি করেছেন সেই রূপকেই সাদরে স্বীকার করে নিই এবং ভালোবাসতে শিখি।আমরা যে কোন পুরুষই নায়ক হয়ে উঠতে পারি যদি সমস্ত প্রচলিত অচলায়তনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সমস্ত বাধাবিপত্তি সত্বেও নিজের আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন, কামনা, বাসনা সমস্ত কিছু পূর্ণ করি। আর কেউ না বললে নিজেই নিজেকে বলি‘ You Go, Boy. Carry on.’
    ইহাই হল প্রকৃত পৌরুষ।

    গোটা দুনিয়া বিপক্ষে চলে গেলেও তাকে অগ্রাহ্য করে নিজের পথে অটুট থাকা, অসম্ভবকে সম্ভব করাই হল প্রকৃত পৌরুষ। প্রতিষ্ঠিত পৌরুষের সংজ্ঞা ভুল। জনাব আশরাফুল হোসেন আলম সেই পৌরুষের সংজ্ঞাকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। তিনিই দেখিয়ে দিলেন যে উপরিউক্ত সঠিক পথ অনুসরণ করলে যে কোন পুরুষই তার জীবনের নায়ক হতে পারে এবং তার জীবনই বাস্তবের রূপকথা হয়ে উঠতে পারে। আমরাই আমাদের জীবনের হোমার ও আকিলিস একসাথে হয়ে উঠতে পারি যদি আমাদের ভেতরের সুপ্ত বাজপাখিকে জাগিয়ে তুলি। আমাদের সমস্ত মৃত স্বপ্নগুলো এই জীবনেই জেগে উঠতে পারে। হ্যাঁ, এই সমস্ত কিছু সম্ভব।
    তাই হিরো আলম, অভিনন্দন তোমাকে। নিজ পথে অটল থাকো এবং যা করছো তা চালিয়ে যাও। কারণ হিরো আলম একটা বিপ্লবের নাম।
    প্রখ্যাত ভূরাজনীতিবীদ ও অর্থনীতিবিদ সৈকত ভট্টাচার্যের ভাষায়ঃ
    তুমি আসল পুরুষ
    তুমি আসল বিপ্লবী
    তুমি চেঁচিয়ে বল প্রথাগত সুন্দর না হয়েও তুমিইই “হিরো আলোম”
    তুমি চেঁচিয়ে বল আল্লাহ কেন তুমি মানুষের মধ্যে রূপ নিয়ে ভেদাভেদ করলে
    তুমি প্লিস লড়াই চালিয়ে যাও
    তুমি দেখিয়েছ যে লম্বা চওড়া না হোয়েও “হিরো” হওয়া যায়
    তুমি দেখিয়েছ যে প্রথাগত সৌন্দর্যের ধারণার বাইরে গিয়েও “হিরো” হওয়া যায়
    তুমি “ইনসেল” শব্দটাকেই ক্রাইসিস-এ ফেলে দিয়েছ
    আসল পৌরুষ সমাজের সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করায়
    আসল পৌরুষ পেশি বানানোয় নয়
    তুমি হিরো হয়ে মুভি করতে থাক “হিরো আলম”।