|
---|
বাবলু হাসান লস্কর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : শীতের লোভনীয় মিঠাই জয়নগরের মোয়া নামটি আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের কাছে বিশেষ ভাবে এক পরিচিত নাম। বংশ-পরম্পরায় ধরে চলে আসা শীতের লোভনীয় খাবার এই মোয়া। এই মিঠাই তৈরির প্রধান উপকরণ নলেন গুড় আর কনেকচূর ধানের খই। গুড় তৈরি করতে লাগে জিরণ কাঠের রস, আর এই রস সংগ্রহ কারিদের বলে শিউলি। কার্তিক মাসে খেঁজুর গাছ বিশেষ ভাবে মুড়ো দেওয়ার পর একপক্ষ কালের মধ্যে বিশেষভাবে কাটা হয়। এবং গাছের মধ্যে একটি নলি বসানো হয় আর এই নল দিয়ে ঝরে আসা রস মাটির ভাঁড়ে জমা হয়। তিন দিন গাছ কাটা আবার তিন দিন বন্দ দেওয়া হয়। বিকালের সময় গাছ কাটা হয় ও সকালে রস সংগ্রহ কারী শিউলিরা তা এক জায়গায় জড়ো করেন। বিশেষ প্রক্রিয়ায় রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যম দিয়ে তৈরি করা হয় গুড় আর এই নলেন গুড় দিয়ে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জয়নগরের মোয়া। যেটা গাঙ্গেয় সুন্দরবন এলাকা থেকে পাওয়া যায়।
অতীতে সুন্দরবন এলাকার ব্যাপক খেজুর গাছ থাকলেও এই মুহূর্তে তেমন দেখা মিলছে না খেজুর গাছ। তার উপরে নির্বিচারে গাছ কাঁটার পর একের পর এক কমছে খেজুর গাছের সংখ্যা। এক সময়ে খেজুর গাছ আর পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে গাঙ্গেয় এলাকায় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক পরিবার। দুটি ঋতুতে রস সংগ্রহ করেন। এক শীতে খেজুর গাছের-রস সংগ্রহ ও গ্রীষ্ম কালে তালগাছের রস দিয়ে তৈরি হয় পাটালি এবং সুস্বাদু গুড় যা পিঠে পার্বণে বিশেষ করে বাঙালির যে পিঠেপুলি উৎসব এ বিশেষ প্রয়োজনে। বর্তমানে এই গুড়ের সুনাম থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে চিনির রস এবং চা পাতার রস মিশিয়ে গুড়ের সুখ্যাতি নষ্ট করছে। এইমুহূর্তে আসল গুড় পাওয়া ভার। সরকার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনে স্থায়ী সমাধান হতে পারে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বারেবারে জানিয়েছেন সুন্দরবন এলাকার আধিকারিক দের। অধিকমাত্রায় তাল ও খেজুর গাছের দেখা গেলে ও এই মুহূর্তে মিলছেনা দেখি। পাথরপ্রতিমার এমন একটি দ্বীপে নদীভাঙন রোধে তাল গাছের বীজ বোনা হচ্ছে । আগামী দিনগুলিতে বিশেষ করে এই রস পেতে যে সমস্ত গাছের প্রয়োজন সেগুলো যদি গাঙ্গেয় এলাকায় বসানো হয় আগামী প্রজন্ম এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের জীবিকা সুদূর হবে এমনই প্রত্যাশা।