রাস্তা অবিলম্বে সারানো না হলে ফের অবরোধ করবেন এমনই ‘হুঁশিয়ারি’

নিজস্ব প্রতিবেদক:- তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা এতই বেহাল, যে গাড়ি চলতে পারে না। এমনই অভিযোগে এবং সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের কুমিরকাটায় অবরোধ করেছিলেন বাসিন্দারা। রাস্তা অবিলম্বে সারানো না হলে, ফের অবরোধ করবেন এমনই ‘হুঁশিয়ারি’ও দিয়েছেন।রাস্তার দুরবস্থার জন্যই ঘটছে দুর্ঘটনা বা মেরামতিতে ‘নিম্ন মানের’ মশলা ব্যবহার হচ্ছে— এমন নানা অভিযোগে প্রায়ই অবরোধ-বিক্ষোভের খবর মেলে। ঠিক তেমনই বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বিক্ষোভও নজরে পড়ে। তবে তৃণমূল সরকারের তৃতীয় পর্বের প্রথম বছরের শেষে, রাস্তা এবং বিদ্যুৎ— দু’টি ক্ষেত্রেই সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের।সূত্রের দাবি, ঝাড়গ্রামের লাগোয়া জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে কম-বেশি ৮০০টি গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তা খারাপ অবস্থায় রয়েছে৷ মুর্শিদাবাদে একাধিক রাজ্য সড়ক বেহাল। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে দুই দিনাজপুর এবং আলিপুরদুয়ারে প্রায় ৩০ শতাংশ, মালদহে ২৫ শতাংশের মতো রাস্তা খারাপ। পাহাড়ে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক রাস্তা ভাল নয়। রাস্তা সারানোয় দেরির অভিযোগে নদিয়ার কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়কে একাধিক বার অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।তবে রাস্তার কাজ হচ্ছে না, তা নয়। পূর্ব মেদিনীপুরে গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার অনেকটাই মেরামত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় ৬৪৪টি রাস্তা একে-একে সংস্কার করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামে গত আর্থিক বছরে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে। বীরভূমে খারাপ রাস্তাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাঁকুড়ায় একাধিক রাজ্য সড়কে সংস্কার হয়েছে। কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনায় রাস্তা সংস্কার চলছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ট্রাকে-ডাম্পারে বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত মাল বহন (ওভারলোডিং) রাস্তা খারাপ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। সে ধরনের গাড়ির জরিমানা বাড়িয়েছে রাজ্য।পূর্ত দফতর সূত্রের বক্তব্য, সব রাস্তা তাদের নয়। অনেক রাস্তা জেলা পরিষদ বা পুরসভার অধীনে। তার পরেও, সংস্কারের প্রয়োজন হলে, সঙ্গে সঙ্গে তা করা হয়। যাঁরা রাস্তা নির্মাণ করেন, তাঁদের দায়বদ্ধ করা হয়েছে গুণমানের প্রশ্নে। পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “পূর্ত দফতরের কোনও রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য দুর্ঘটনার খবর আমাদের কাছে নেই। বরং, আমরা গুণগত মান এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। এই দু’টি নিয়েও কোনও অভিযোগ আসেনি।’’আর বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘যে কোনও জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য যে মূল পরিকাঠামো দরকার, তা রাজ্যের সব জায়গায় (অর্থাৎ, ১০০ শতাংশ) তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য হাই-টেনশন ও লো-টেনশন তার সর্বত্র পৌঁছেছে।’’ উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং জেলায় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন ১০০ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনেরও।তবে প্রশাসন সূত্রেই খবর, বিদ্যুদয়নে হাওড়ায় ৯৮ শতাংশ, কোচবিহারে ৯০ শতাংশ, দুই দিনাজপুরে ৮৯ শতাংশ কাজ হয়েছে। মালদহের হবিবপুর, গাজল, বামনগোলার কিছু গ্রামে এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু নতুন বসতিতে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিংয়ের সমস্যা রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায়।বিদ্যুদয়ন বাকি থাকা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের দাবি, কোনও এলাকায় হয়তো নতুন বসতি বা আবাসন তৈরি হয়ে থাকতে পারে। সেখানেও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ধাপে ধাপে গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২১-২২ সালে ১৭টি নতুন ৩৩/১১ কেভির সাবস্টেশন তৈরি হয়েছে রাজ্যে। গত এক বছরে নতুন ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে ২০,৮৬৬টি। ৩৩৪ কিলোমিটার নতুন ৩৩ কেভি লাইন বসানো হয়েছে। নতুন ১১ কেভি লাইন বসেছে ৫৭৮ কিলোমিটার এলাকায়। আর ৭,৫৬৫ কিলোমিটার নতুন লো-টেনশন লাইন তৈরি করা হয়েছে।