|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : আসক্ত শরীর। চোখের কোণ চিকচিক করছে। চোখের জল অনেক চেষ্টা করে আটকে রেখেছেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ১৭ নং এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ থেকে শোনা কথাগুলো হয়তো মনে পড়ছে ৭৬ বছরের বৃদ্ধার। ‘‘এখনও বিচার ব্যবস্থা আছে। চিন্তা করবেন না। আপনি উপযুক্ত বিচার পাবেন…।’’ বকেয়া বেতন সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন ৭৬ বছরের প্রাক্তন শিক্ষিকার উদ্দেশে মন্তব্য ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ।
২৫ বছর ধরে বেতন পাননি বাংলার শিক্ষিকা। সব বেতন এরিয়ারের সঙ্গে মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়ে ৩৬ বছর ধরে চলা মামলার নিষ্পত্তি করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯৭৬ সালে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে হাওড়ার শ্যামপুর হাই স্কুলে যোগদান করেন শ্যামলী ঘোষ। সমস্যা শুরু ১৯৮০ সাল থেকে। মাত্র চার বছর কাজ করার পর স্কুলের হেডমাস্টার তাঁকে আর আসতে হবে না, বলে দেন। অভিযোগ স্কুলে গেলেও তাঁকে লোক দিয়ে বের করে দিতেন হেডমাস্টার। ১৯৮৬ সালে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন শ্যামলী দেবী।২০০৫ সালে অবসর নেন তিনি। যদিও স্কুলে সেই বছরেও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে হাই কোর্ট বিচারপতি অশোক কুমার দাস অধিকারী শিক্ষিকার যাবতীয় বেতন ও পেনশন দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পর পেনশন দেওয়া হলেও বেতন দেয়নি মধ্যশিক্ষা বোর্ড। বছর ঘুরেই যায়। শিক্ষিকার মামলার সুরাহা হয়নি। আর্থিক অনটনের জন্য আইনজীবী ছাড়া নিজেই মামলার শুনানিতে অংশ নেন। ছিয়াত্তরের বৃদ্ধাকে দেখে শেষমেশ তাঁর মামলা দ্রুত শোনার আর্জি গ্রহণ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিলাল মৈত্র তার হয়ে সওয়াল করেন। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও বৃদ্ধাকে তাঁর প্রাপ্য না মেটানোয় ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ে’র নির্দেশ, বকেয়া-সহ যাবতীয় বেতন দেবে বোর্ড। যার মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে ১০% সুদ-সহ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে স্কুল এডুকেশন কমিশন তাঁকে পাওনা মিটিয়ে দেবে। টানা ছত্রিশ বছরের অসম লড়াইয়ে পর আদালতের নির্দেশ শুনে এজলাসেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা, শিক্ষিকা। তাঁর সিএ পাঠরত ছেলের চোখেও তখন জল। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার ঘরে আসা বৃদ্ধ নাগরিককে খালি হাতে ফেরাতে পারিনা।’’ তবে আদৌ টাকা বৃদ্ধার হাতে শেষমেষ পৌঁছাল কি না তা জানতে মামলার নিষ্পত্তি করেননি তিনি।