কলি খা’র কলিগ্রামে ১০০ বছরের ঐতিহাসিক পুজো আজও ঐতিহ্যপূর্ন

উজির আলী,চাঁচলঃ ২৯ সেপ্টেম্বর:মালদা জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম। ছোটো হলেও ঘনবসতিতে পরিপূর্ন। প্রায় ১০,০০০ পরিবারের বসবাস এই গ্রামে। হিন্দু-মুসলিম উভয়েই বসবাস করেন এই ছোট্র গ্রামে। গ্রাম ছোটো হলেও উৎসবের মরশুমে বড় আকার ধারন করে। মালদহের চাঁচল শহর লাগোয়া ছোট্র গ্রামটি অবস্থিত।

    যদিও এই গ্রামের নাম পুর্বপুরুষরা কলি গাঁও নামাঙ্কিত করেছিলেন তা পরবর্তীতে কলিগ্রাম নামে ধারন করেছে সরকারী খাতে। গ্রামের পূর্বপুরুষ বলতেন,শত বছর পূর্বে আফগান থেকে আসা কলি খাঁ এই গ্রাম বসবাস শুরু করেন। তাঁর নামানুসারেই কলিগ্রামের নামকরন হয়। চাঁচলের কলিগ্রাম বর্তমানে ঘনবসতিপূর্ন। গ্রামে উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস কারীরা নিজ ধর্ম পালন শুরু করেন বহু বছর পূর্বে। আজও তা বিরাজমান। বাঙালির যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ দূর্গোপূজো তেমনি কলিগ্রামের পক্ষে একই।

    এই গ্রামে ছোটো বড়ো মিলিয়ে সর্বমোট ১০ দূর্গা প্রতিমার পূজো হয়। তারই মধ্যে বারোয়ারী পূজো ৪ টি, ১ টি সংঘ দ্বারা ও ৫ টি ঘরোয়া পূজো। বারোয়ারী পূজোর মধ্যে একটি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। গ্রামের বগচড়া সার্বজনীন,মালকাছাড়ী সার্বজনীন, কাঁসারি পাড়া চন্ডী মন্ডপ সার্বজনীন, কলিগ্রাম বাজার সার্বজনীন, এই চারটি বারোয়ারী পূজো সার্বজনীনে পূজিত হয় প্রতিমা। তবে গ্রামের একটি প্রতিমা ঐক্য সম্মেলনী সংঘের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই পূজোটি কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয়। গ্রামের সর্ব বাজেটফুল পূজো ঐক্য সম্মেলনী সংঘ। যা গ্রামে শ্রেষ্ঠ আকার ধারন করে। অসাধারণ দৃশ্য প্রতিমা,প্যান্ডেল ও আলোক সজ্জা।

    তবে ঘরোয়া পূজো গুলি কোনো কিছুর দিকে কম নয়। কলিগ্রামের ঘরোয়া পূজা গুলি লক্ষ্য করা যায়, স্বর্গীয় নিখিল চৌধুরী ভবন,স্বর্গীয় মধু নন্দী ভবন, স্বর্গীয় রমেন রায় চৌধুরী ভবন, স্বর্গীয় রবি রায় চৌধুরী ভবন,স্বর্গীয় ডল মজুমদার ভবন। এই পাঁচটি ভবনে ঘরোয়া পূজা আয়োজিত হয়। পরিবার ছাড়া গ্রামের মানুষরাও ঘরোয়া পূজোয় লিপ্ত হয়।বাঙালী হিন্দু রীতি অনুযায়ী,ষষ্ঠী থেকে মায়ের আগমনে উল্লাসিত হয় গ্রামের সনাতন সম্প্রদায়। ষষ্ঠী থেকে মায়ের চরন থেকে শুরু হয় পূজো এবং দশমীতে মায়ের বিসর্জনে তা সমাপ্তি ঘটে।

    বারোয়ারী পূজোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কলিগ্রাম বাজার সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটি। বহু বছর ধরে এই প্রতিমার পূজো আয়োজিত হত কলিগ্রাম উচচ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। বর্তমানে তা স্থান্তরিত হয়ে স্বরসতী শিশু মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। তবে এইখানে ষষ্ঠী থেকেই ভিড় জমান গ্রামবাসী। প্রতিমা বিসর্জন না হওয়া পযর্ন্ত পাঁচদিন ধরে চলে মেলা। দশমী একত্রিত হয় সারা গ্রাম। আনুমানিক ৫ হাজারের ও বেশী সমাগম ঘটে দশমীতে।
    তবে এই গ্রামের শারদ উৎসবে বিশেষ আকর্ষন হল দশমীতে রাবন বোধ। ঐক্য সম্মেলনী সংঘের দ্বারা পরিচালিত অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য রাবন বোধ। সেই সময় হাজারো দর্শকের ঢল পরে সেই বোধ দেখার জন্য।

    কলিগ্রামের দূর্গােৎসবে পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বিশেষ ভুমিকা পালন করে। স্থানীয় চাঁচল থানার পুলিশ কর্মীরা ষষ্ঠী থেকে দেবী বিসর্জন অব্দী যথেষ্ট কর্তব্য পালন করেন এই গ্রামে।