|
---|
জাকির হোসেন সেখ: এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসক নিগ্রহ এবং বিজ্ঞাপন অভিনেত্রী উশোসী সেনগুপ্তাকে হেনস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত অপরাধকে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের অপরাধ বলে স্বীকার করে উপযাচক হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট ক্ষমা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন কোলকাতার তথাকথিত “মুসলিম নাগরিকদের একাংশ”। এ পর্যন্ত মুসলিম সমাজের হিতার্থে যাঁদের নামগন্ধ পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও যাঁরা নিজেরাই নিজেদেরকে মুসলিম সমাজের একেকজন মসিহা বলে মনে করেন। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা হাসির খোরাক জোগালেও, মুসলিম সম্প্রদায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ তাঁদের সেই চিঠির বক্তব্য, ভাষা আর ভঙ্গিমা দেখে হতবাক গোটা মুসলিম সমাজের সাথে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অমুসলিম নাগরিকরাও। চিঠিতে উল্লেখ করা হালফিলের দুটি ঘটনায় যুক্ত দু’পক্ষের মধ্যে এক পক্ষকে নিগ্রহ, হেনস্থা আর উত্যোক্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা তো হয়েছেই, উপরোন্তু তাদের ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে সুদুরপ্রসারী অভিসন্ধির কৌশলে “তারা যেন মুসলিম সম্প্রদায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায়” এই কারণে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় চিঠিতে সই করা ৫০ জন ভুঁইফোড় ওই তথাকথিত মুসলিম হিতাকাঙ্খী বিচার শেষ হওয়ার আগেই উল্লিখিত পক্ষকে দোষী সাব্যস্তও করে দিয়েছেন !
প্রশ্ন হচ্ছে, অপরাধ তো শুধুমাত্র অপরাধীর সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট থাকার কথা ? তা না হয়ে আগবাড়িয়ে তার ধর্মীয় পরিচয় টেনে এনে জল ঘোলা করার পেছনে পত্রলেখকদের আসল উদ্দেশ্যটা
প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
সারাদেশ জুড়ে একটা পক্ষের সচেতন প্রচেষ্টায় যেখানে মুসলিম বিদ্বেষের বীজ বপন করা হচ্ছে, তার জেরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রবণতাও যখন বাংলার ঘরে ঘরে অপেক্ষামান। তাসের ঘরের মতো সৌহার্দ্যের ভিতটা ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়।
বাঙালি কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি বুঝতে অপারগ একশ্রেণীর অবাঙালি মানুষ জনের তারা তাদের আগ্রাসী মনোভাবে বাংলার বেশকিছু জায়গায় একটা সম্প্রদায়ের ওপর লুটপাট, বোমাবাজি, শারীরিক আক্রমণ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে আক্রান্ত সম্প্রদায়ের গায়েই নানা ধরনের অপরাধের তকমা লাগিয়ে জনমানসে বদনাম করার জোরালো অভিযান জারি রয়েছে, তাপরেও মুসলিম সম্প্রদায়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া মানেই তো আবহমান কাল থেকে চলে আসা মুসলীম সম্প্রদায়ের প্রতি “মিথ্যা তকমা” লাগানোর চেষ্টাতে সিলমোহর যুক্ত করা ?
সেই চেষ্টাটাই কি করে দেখতে চেয়েছেন এই ৫০ জন তথাকথিত “মুসলিম হিতাকাঙ্খী” এই পত্রলেখক ?
সামান্য কয়েকজনের কুআচরণে গোটা সম্প্রদায়কে কেন সমালোচিত হতে হবে ? — এই প্রশ্নেই যদি কারোর প্রতিবাদ থাকে, তাহলে সামান্য কয়েকজনের কুআচরণে অথবা অপরাধে গোটা সম্প্রদায়ের হয়ে ক্ষমা চাওয়াটাই তো জঘণ্যতম দ্বিচারিতা ? সবথেকে বড় কথা, সাধারণ বাঙালি মুসলমানের কাছে নামগোত্রহীন ৫০ জন অবাঙালির পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য যদি এতই দরদ তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গোপনে চিঠি না দিয়ে একবার অন্তত প্রেস কনফারেন্সও তো করতে পারতেন ?
আসল কথা হলো চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী !!