শেষবারের মতো মেয়েটাকে বাড়ি ফিরতে দিন সাহেব, হাত জোর করে অনুরোধ করার পরও অনুমতি পাইনি ধর্ষিতার পিতা

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক : মেয়েটাকে রাতভর রেখে ছেড়ে দিলেও মেনে নিতাম সাহেব। কিন্তু গাছে ঝুলিয়ে দিল! মেয়ের জন্য বিচার চাইতে আসা অসহায় বাবার মুখে এমন কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন পুলিশকর্তা। ‘স্পর্ধা’ দেখিয়ে তিন টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল মেয়েটি এবং তার এক বোন। ‘অওকাত’ বুঝিয়ে দিতে তাদের ধর্ষণ করে গাছে টাঙিয়ে দিয়েছিল এলাকার প্রভাবশালী ঠিকাদার। পুলিশকর্তার কাছে সেই ঘটনারই বিচার চাইতে এসেছিল মেয়ে দু’টির পরিবার।

     

    দৃশ্যটি বাস্তবের নয়, ‘আর্টিকেল ১৫’ নামে একটি চর্চিত সিনেমার। কিন্তু, মঙ্গলবার গভীর রাতে উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর আছাড়ি পিছাড়ি করে কেঁদে চলা মায়ের কথাগুলো কোথাও যেন মিলিয়ে দিচ্ছিল বাস্তব আর চিত্রনাট্যের দুনিয়াকে। সাদা কাপড়ে বাঁধা দেহটা তখনও গাড়িতে রাখা, পুলিশের উদ্দেশে মায়ের করুণ আর্তি, ‘শেষবারের মতো বেটিকে বাড়ি ফিরতে দিন। বেঁচে ফিরতে পারল না। এ ভাবেই ফিরুক অন্তত।’ মেয়ের পিতা উর্দিধারীদের সামনে হাত জোড় করে বলেই চলেছেন তিনি এক বারের মতো বাড়ি ফিরতে দেন সাহেব , এক বার নয়, হাজার বার বলেই চলেছে যে ভিডিয়ো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু, এত কিছুর পরও অনুমতি দেয়নি পুলিশ।

     

    চিত্রনাট্যের ভয়াবহতা উত্তরপ্রদেশের একটি দলিত গ্রামের। স্পর্ধা দেখিয়ে খুন হওয়া দুই কন্যাও দলিত-ই। বাস্তবের ঘটনাটিও সেই একই রাজ্যের। এক্ষেত্রেও নৃশংসতার শিকার এক দলিত কন্যা। তবে, ধর্ম বা জাতি দিয়ে অপরাধের বিচার হয় না। এটা কোনও যন্ত্রণার মাপকাঠিও হতে পারে না। কিন্তু, প্রশ্ন তো উঠতেই পারে যে, কতটা অসহায় হলে একজন মা বা বাবার পক্ষে এমন কথা বলা সম্ভব?

    অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষের কথায়, ‘অসহায়তা তো বটেই। হাথরসের ঘটনায় মেয়েটির মায়ের কানে সমস্যা রয়েছে। ফলে, সে দিন মেয়ের চিৎকার শুনতে পাননি তিনি। তাঁর সেই কষ্ট কিছুটা তো লাঘব হত যদি মেয়েকে শেষবার কাছ থেকে দেখার সুযোগটা পেতেন।’ তাঁর মতে, আরও স্পর্শকাতর ভাবে বিষয়টি দেখা উচিত ছিল পুলিশের।

    মনস্তত্ত্ববিদ শতভিষা চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মা-বাবার এই আর্তির নেপথ্যে অসহায়তার পরিবর্তে তাঁদের ভালোবাসাকেই বড় করে দেখতে চান। তাঁর মতে, ‘সিনেমা বা বাস্তব দু’ক্ষেত্রেই এটা স্পষ্ট যে মেয়ের সঙ্গে হওয়া ঘটনাকে শুধুমাত্র শারীরিক অত্যাচার হিসেবেই দেখছেন মা-বাবা। রুপোলির পর্দার বাবার আক্ষেপ, মেয়েটা প্রাণে বাঁচল না। অর্থাৎ, বেঁচে গেলে তাকে আপন করে নিতে তাঁর কোনও সমস্যা ছিল না। একই ভাবে মেয়ের এমন মৃত্যুর পরও তাঁকে শেষবার বাড়ি নিয়ে যেতে কোনও আপত্তি নেই বাস্তবের মায়ের। সমাজ কী বলবে, লোক কোন চোখে দেখবে – এ সবের থেকে মেয়ের প্রতি ভালোবাসা তাঁর কাছে অনেক বড়