লোকসভায় লোকের মাঝেঃ কেন্দ্র মথুরাপুর

জাকির হোসেন সেখ, নতুন গতি, মগরাহাট পশ্চিম: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৪টে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একেবারে বঙ্গোপসাগর থেকে ডাঙায় উঠে নদ নদী জলা জঙ্গল পেরিয়ে মহকুমা শহর ডায়মন্ড হারবারকে পাশ কাটিয়ে আধা শহর শিরাকোল পর্যন্ত ব্যাপ্ত যে মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্র, বলা যায় যে কোন নির্বাচনেই সেভাবে প্রচারের আলোয় আসে না।

    ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভায় এই কেন্দ্রে ভোট হয়েছিল ১২ ই মে। সেবার তৃনমূলের প্রার্থী ছিলেন এই কেন্দ্র থেকে ২০০৯ সালে প্রথম সাংসদ হ‌ওয়া চৌধুরী মোহন জাটুয়া। এবারেও তিনিই প্রার্থী। এবারের জয় মানেই হ্যাট্রিক। জাটুয়ার বিরুদ্ধে গতবার বামফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন অল্প বয়সী রিঙ্কু নস্কর। পোড় খাওয়া প্রবীণ রাজনীতিক মনোরঞ্জন হালদার ছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী আর বিজেপি থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তপন নস্কর।

    ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় ডিলিমিটেশন কমিশনের দ্বারা সীমানা পুনর্বিন্যাস করণের আগে ২০০৪ সালের লোকসভায় মথুরাপুর কেন্দ্র ছিল ১২১ নং মগরাহাট পুর্ব (তপঃ), ১২২ নং মন্দির বাজার, অধুনা অবলুপ্ত ১২৩ নং মথুরাপুর, ১২৪ নং কুলপি (তপঃ), ১২৫ নং পাথর প্রতিমা, ১২৬ নং কাকদ্বীপ এবং ১২৭ নং সাগর বিধানসভা নিয়ে গঠিত।

    সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ১৩০ নং পাথরপ্রতিমা, ১৩১ নং কাকদ্বীপ, ১৩২ নং সাগর, ১৩৩ নং কুলপি, ১২৩ নং মথুরাপুর বিধানসভার অবলুপ্তি ঘটিয়ে গঠিত ১৩৪ নং রায়দীঘি, ১৩৫ নং মন্দিরবাজার এবং ১৪২ নং মগরাহাট পশ্চিম- এই ৭টা বিধানসভা নিয়ে গঠিত মথুরাপুর লোকসভা তফশিল সংরক্ষিত আসন।

    তৃনমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা বছর ১৯৯৮ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী রাধিকারঞ্জন প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যোগরঞ্জন হালদারকে তৃনমূলের প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার ১৯৯৯ সালের ভোটে আগের বারের পরাজিত প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদারকে সরিয়ে তার জায়গায় প্রার্থী করেছিলেন গোবিন্দ চন্দ্র নস্করকে। তিনিও পরাজিত হয়েছিলেন।

    ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃনমূল বড় ধরনের চমক দেখিয়ে সিপিএম থেকে আগত সাংসদ রাধিকারঞ্জন প্রামাণিককে তৃনমূলের টিকিটে সিপিএমের বাসুদেব বর্মনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে ছিলেন। ক্ষুব্ধ রাধিকারঞ্জন প্রামাণিক দলবদল করে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েও পরাজিত হয়েছিলেন।

    ২০০৬-৭ এ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-রিজ‌ওয়ানুর হত্যা ইস্যুর পর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে যে ইঙ্গিত মিলেছিল, তাতে পরিস্কার বোঝা গিয়েছিল যে তৃনমূল ঝড় শুরু হয়ে গেছে। সেই তৃনমূল ঝড়ে পরের বছর ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম জয় পাওয়া তৃনমূল সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়াকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

    ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভায় জাটুয়া সাহেব তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের অনিমেষ নস্করকে ১,২৯,৯৬৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে যেখানে সর্বমোট ভোট পেয়েছিলেন ৫,৬৫,৫০৫ টি, সেখানে গতবারের ষষ্ঠদশ লোকসভায় আরো ৮৪৭৩ টি ভোট বাড়িয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের রিঙ্কু নস্করকে ১,৩৮,৪৩৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সর্বমোট ভোট পেয়েছিলেন ৬,২৭,৭৬১টি। তৃতীয় বারে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম নাকি বিজেপি ১৯ শে মে ভোটের পর ২৩ শে মে ভোট গণনার দিন জানা যাবে।
    চলবে………….