মে দিবস এবং ইসলামের শ্রমনীতি

 

    জাকির হোসেন সেখ: শ্রম হচ্ছে সৎপথে জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায়, তা সে কায়িক হোক বা বুদ্ধিভিত্তিক। যদিও কায়িক শ্রম‌ই আসলে মে দিবসের রক্তক্ষয়ী শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে জড়িত, যা কিনা ১৮৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের প্রতি নিপীড়ন পরবর্তী সময়ে সংগঠিত হয়েছিল।
    তার‌ও ১৩শ বৎসরের‌ও অধিক সময় আগে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দারিদ্রমুক্ত করতে ইসলাম ধর্ম “পরিশ্রম” করাকে যারপরনাই উৎসাহিত করেছে। এমনকি পরিশ্রম করে রোজগার করা অর্থাৎ একবারে চলতি কথায় যাকে বলে ‘খেটে খাওয়া’ কে ইবাদাত হিসেবেই গণ্য করেছে। পবিত্র কোরআনের সূরা ‘আন্ নজম’ এর ৩৯ থেকে ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আর মানুষের প্রাপ্য শুধু তা, যার জন্য সে চেষ্টা ও শ্রম করেছে। চেষ্টা ও শ্রম অবশ্যই গুরুত্ব পাবে এবং চেষ্টা ও শ্রমকারীকে তার পূর্ণমাত্রার প্রতিফলন অবশ্যই দেয়া হবে।’’
    আমরা অন্যান্য পরিপ্রেক্ষিতেও অনেক সময় পবিত্র কোরআনের সূরা “রা’দ” এর যে আয়াত ব্যবহার করি, সেই “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’’ – আয়াতও যে আসলে
    শ্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর তাগিদ দিয়েই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, এটা বোঝা যায়। আর হাদিস শরিফে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা ফরজের পরে ফরজ। (বায়হাকী)
    এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মে দিবসের চেতনা আসলে শিকাগো শহরে নয় বরং ইসলামের আদর্শ থেকেই আগত।
    তাই সমগ্র বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের এক স্মরণীয় দিন এই মে দিবসকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বলতে হবেই সেই আদর্শের কিছু কথাও, ইসলামের যে আদর্শ আসলে অনুপ্রাণিত করেছিল শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে।নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী হয়তো আজ পালিত হচ্ছে এই মে দিবস।

    মে দিবস পালনের সভা সমিতির বক্তব্য থেকে ইসলামকে বাদ দিয়ে আজ হয়তো শুধু শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ঐক্য, সংহতি, শ্রমিক শ্রেণী, শ্রমের মর্যাদা, ন্যূনতম মজুরি, শ্রম শোষণ, শ্রমিক মালিক সম্পর্ক – ইত্যাদি বিষয়‌ই উঠে আসবে। কিন্তু শ্রম, শ্রমিক, আর মালিক সংক্রান্ত বিষয়ে ইসলামের যথার্থ ব্যাখ্যা ও দিক নির্দেশনা থেকে অনুপ্রানিত হয়েই যে আজকের যে দিবসের উৎপত্তি, একথা আমরা ভুলতে বসেছি।