হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটালেন পরিযায়ীদের বন্ধু মহম্মদ রিপন

হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটালেন পরিযায়ীদের বন্ধু মহম্মদ রিপন

    নতুন গতি ডেস্ক : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর রামচন্দ্রপুর গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাগলা নদী। বর্ষাকালে নদীর জল কূল উপচে গ্রামে এসে পড়ে তখন নদীর কুলুকুলু শব্দে হৃদয় নাড়া দিয়ে যায় কিন্তু অসময়ে চোখের জল শাবরুল ও রহিমা বিবির। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে, স্নেহ ও মায়ার জালে তিলে তিলে বড় করে তুলেছিলেন যাকে সেই ছেলেটিই নিখোঁজ। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হবে, দেশ গড়ার কাজে লাগবে কিন্তু বাবা-মায়ের সাথে বাধ সেজেছে তাদের দুরন্ত ছেলেটি।  দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। গ্রামের দিকে উন্নত স্কুল ও উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকার জন্য অনেক ছেলে-মেয়ে অক্ষরজ্ঞানহীন হয়ে পড়েছে।  অনেক ছেলে-মেয়ে স্কুলছুট হয়ে গেছে। কিন্তু তার মধ্যেও স্বপ্ন দেখছেন গ্রামের দিনমজুর পরিবারের মানুষগুলো।  দিনমজুর পরিবারগুলো পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে দুঃখ দুর্দশা দেখে অভ্যস্ত তাই তারা চাইছে না তাদের ছেলেমেয়েগুলো তাদের মত পরিযায়ী শ্রমিক হোক। দুঃখ ও অনটনের সংসারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনো ত্রুটিই রাখছেন না গ্রামের মানুষগুলো। প্রতিটি বাবা মায়ের মতোই ইয়াসের বাবা-মা চেয়েছিল তাদের ছেলেকে মস্ত বড় অফিসার বানাবে।  কিন্তু ইয়াস দুরন্তপনায় চিন্তিত ছিল তার বাবা মা।  হঠাৎ একদিন ইয়াস স্কুলে না গিয়ে খেলতে গেলে তার বাবা শাবরুল সেখ তাকে বকাঝকা করে। বাবার কথায় রাগ করে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বছর ১৩ বছর বয়সের ইয়াস সেখ।  অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর তার খোঁজ মেলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলাতে। ছেলেকে ফিরে পেতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন ইয়াসের বাবা শাবরুল। ছেলের সন্ধান পেতে পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করলে থানার আধিকারিক তাদের বলে ছেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক মিসিং ডায়েরি হবে না?  পুলিশ একটি জেনারেল ডায়েরি করে তাদের ফিরিয়ে দেয়।  বাস এই টুকুই। ছোট্ট ছেলেকে ফিরে পেতে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য থেকে বিধায়কের দরবার ছুটি করেছেন রহিমা ও শাবরুল। চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের বীরভূম জেলার সহযোদ্ধা মোহাম্মদ রিপনের ছেলে হারানোর এই কথাটি জানতে পারেন। মুরারাই বিধানসভার বিধায়কের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আলম সেখ সমস্ত ব্যাপারটা পরিযায়ী শ্রমিকদের বন্ধু রিপনকে খুলে বলে।  রিপন সমস্ত ঘটনাবলি শোনার পর ইয়াশের মামা জিয়ারুল ও ওই গ্রামের যুবক লিটনের সাথে কথা বলে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।  রিপন জানান, ইয়াসের মামার কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শোনার পর মনটা যেন ব্যাকুল হয়ে গেছিল।  ছোট্ট ইয়াস প্রায় দুমাস ধরে শিলিগুড়ির হোমে বন্দি ছিল।  দুরন্ত ইয়াসের বয়সটা এই খোলা আকাশের নিচে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া ও কোলাহল করার কিন্তু সে তোতাপাখির মতো খাঁচাবন্দি শিলিগুড়িতে।

    ইয়াসের মামা আরো জানাই,  বীরভূম ডিস্ট্রিক চাইল্ড লাইন থেকে কয়েকজন অফিসার আমাদের বাড়িতে এসে সার্ভে করে গেছে কিন্তু ১৫ দিন হওয়ার পরও এখনো আমরা আমাদের ভাগ্নেকে পাইনি। ছেলেটি আমাদের রাজ্যে আছে অথচ একটি ছেলেকে ফিরে পেতে এতটা কি সময় লাগে? প্রশাসনের তৎপরতায় কি তাড়াতাড়ি ছোট্ট ইয়াসকেঘরে ফিরে পাওয়া যেত না?  রিপন ছোট্ট ইয়াসের কথা ভেবে,  তার বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে কাজ শুরু করে। যোগাযোগ করে বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রটেকশন ইউনিট, চাইল্ড লাইন আধিকারিক ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রকের সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি ,  ডেপুটি সেক্রেটারীই, শিলিগুড়ি জেলা ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিটের সাথে। বীরভূম ডিস্ট্রিক চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিটের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।  অবশেষে সোমবার ছেলেটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
    এদিকে রাজ্য সভাপতি অধ্যাপক সামিরুল ইসলাম ও সম্পাদিকা মনীষা ব্যানার্জিরা রিপনের এই কাজ করলে অত্যন্ত খুশি।  তারাও সর্বদা মানুষের বাংলা সর্বদা কাজ কর্ম করে জান। এদিকে নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নাজরিন সুলতানা জানান, ছেলেটি বাড়িতে ফিরে এসেছে তার বাবা-মায়ের কোল খুব আনন্দ হচ্ছে। মহম্মদ  রিপনের কাছে আমি ব্যাপারটা শুনেছিলাম এবং তাকে আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতায় সমস্ত ধরনের আশ্বাস দিয়েছিলাম । রিপন আমারই গ্রামের ছেলে অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং মেধাবী একজন ছেলে।  সব সময় মানুষের কথা ভাবে মানুষের জন্য কাজ করে। লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিক দের সমস্যা থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের ব্যবস্থা,  যেকোন সমস্যার সমাধানে সর্বদা এগিয়ে যান। সমাজের জন্য মহম্মদ রিপন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে বারবার।