পদ্মবাগে সবে মুকুল, ঝড় এখনো বাঁকি

 

    শরিফুল ইসলাম, শান্তিপুর: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় যতই নতুন চমক দেখানোর দাবি করুন, তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মুকুল রায় কে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী তালিকা প্রস্তুতিতে তৃণমূলের বার্ত‍্য মুখ গুলোর উপরই কার্যত নির্ভর করতে হচ্ছে।
    বৃহস্পতিবার , দিল্লিতে, ভাটপাড়ার চার বারের তৃণমূল বিধায়ক ঘোর মুকুল বিরোধী অর্জুন সিং সেই মুকুলের হাত ধরে পদ্ম শিবিরে নাম লেখালেন।

    সূত্রের খবর ,অর্জুন আশা করেছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের পক্ষে ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন তিনি। প্রত্যাশার বিষয়টি দল ও ঘনিষ্ঠ মহলের মাধ্যমে দিদি মণির কানেও পৌঁছে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত টিকিট পান নি। তৃণমূল সুপ্রিমো ওই কেন্দ্রে গত বারের বিজয়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বর্ষীয়ান দীনেশ ত্রিবেদীর উপরেই ভরসা রাখেন।

    কালীঘাটে দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল নেত্রী দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন। জানা যায় , এর পরেই ‘মুকুল-অর্জুন’ দৌত্য হয় এবং বিজেপি ব্যারাকপুরে আসনটি তাঁকে দেবেন নিশ্চিত করার পর অর্জুন দল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। অন্য দল থেকে যে ভাবে লোক ঢোকানো হচ্ছে বিজেপিতে আগামী দিনে তা মোটেই সুখের হবে না, কান পাতলেই দলের অন্দরে ফিস ফিস করে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বিজেপির এক পুরোনো রাজ্য নেতার বক্তব্য, “এই ভাবে দুষ্ট গরু দিয়ে গোয়াল ভরান, আর গল্পে গরু গাছে তুলুন, এসব দলের আত্মঘাতের সামিল,পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবির কে মুকুল বাবু ভুল পথে চালিত করছেন।”

    যে যাই বলুক, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মোদি-অমিত শাহরাও বিজেপির বঙ্গবিগ্রেডের কান্ডারী হিসাবে এক সময়ের তৃণমূলের দু’নম্বর মুকুল রায় কেই বেছে নিয়েছেন। মুকুলও ‘তোরা যে যা বলিস ভাই’ আমার কি এসে যায়, এই নীতি নিয়ে চলছেন। এ-যাত্রায় মুকুলের নির্বাচনী কৌশলের পাখির চোখ তৃণমুল ও কংগ্রেসের — ক্ষুব্ধ নয়তো বহিষ্কৃত নেতা কর্মী। কিছু কিছু জায়গায় সিপিএমের দলছুট নেতাও রয়েছেন

    এভাবেই তৃণমূলেরই প্রাক্তনী মুকুল রায় আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বাজি মাত করবেন বলে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে, মনে করছেন দলেরই একাংশ। ইতিমধ্যে, নয়া দিল্লির বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয় বর্গীয়র কে সঙ্গে গৌতম ঘোষের মতন দুয়েক জন কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দাবি করেছিলেন , এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে ত্রিশ টির বেশি আসন তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কে উপহার দেবেন।

    আগেই মুকুলের হাত ধরে পদ্ম ছুঁয়েছেন তৃণমূলের সাংসদ সৌমিত্র, অনুপম হাজরা, শঙ্কু দেব পান্ডা, জঙ্গলমহল খ্যাত আইপিএস ভারতী ঘোষ, এঁরা সকলেই এক সময় তৃণমূলে আস্থাভাজন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলেন। বর্তমানে রোজভ্যালি বা সারদা বা অন্য কোনো মামলায় অর্থ তছরূপের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং কেউ বহিষ্কৃত নয়তো দলে কল্কে হারানো ছাত্র নেতা।
    এরপরেও নতুন নতুন যাঁরা আসবেন বলে আশা করছেন মুকুল রায়, ধারণা করা হচ্ছে , তাঁরাও বিরোধীদলের বহিষ্কৃত নতুবা টিকিট চেয়ে ব্যর্থ অথবা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। এই ট্রেন্ড নিয়ে বাংলায় ত্রিশটি আসন তো দুরাস্ত মুকুল বাবু নিজের আসনটি পাকা করতে পারবেন কি না সন্দেহ , মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একটা বিরাট অংশ।